শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় পালালেন হাজারও আনসার সদস্য

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ২৩:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের কয়েক মিনিটেই শিক্ষার্থীদের জনস্রোতে পালিয়ে গেছেন হাজারো আনসার সদস্য।

জানা গেছে, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন আনসার সদস্যদের একাংশ। আজ সকাল থেকে সচিবালয় ঘেরাও করেন তারা। এসময় সচিবালয়ের ভেতরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়ে যান। আটকে পড়েন সংবাদকর্মীরাও। 

রোববার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যান তারা। এরপর দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আনসার সদস্যরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পালিয়ে যান। 

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটক রাখার খবরে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে।

এ সময় কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে আনসার সদস্যরা। পরে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আনসার সদস্যরাও পিছু হটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে রাত পৌনে দশটার দিকে আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের পাশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ কিছু আনসার সদস্যকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে দেখা যায়। তখন আনসার সদস্যদের উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে গেলে আনসার সদস্যরা তাদের ওপর ইট-পাটকেল মারতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আনসার সদস্যরা গুলিও করেন। শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস মারারও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের গুলি, ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যায়। তারপর তারা আনসার সদস্যদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আনসার সদস্যরা সচিবালয় ছেড়ে পালিয়ে যান।

 এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আনসার সদস্যদের ধাওয়া দিলে তারা সচিবালয়ের সামনে থেকে পালিয়ে যান। এরমধ্যে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। একপর্যায়ে পুলিশ সেখানে টিয়ারশেল ছুড়েন। এতে ঘটনা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এর আগে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে তাদের আটকে রাখার বিষয়টি জানালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমা হতে থাকে। পরে রাত ৯টায় তারা সচিবালয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ করে সমন্বয়ক হাসনাত ফেসবুক পোস্টে লেখেন, সবাই রাজুতে আসেন। স্বৈরাচারীশক্তি আনসার হয়ে ফিরে আসতে চাচ্ছে। দাবি মানার পরও আমাদের সবাইকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আজ (রোববার) সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে তিন নম্বর গেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েন। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাদের প্রতিনিধিদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে কিছুক্ষণ পরই আবারও আন্দোলন শুরু করেন আনসারের অন্য সদস্যরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।