শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানা এলাকায় চাঞ্চল্যকর সজিব মুন্সি হত্যা মামলাসহ অর্ধশতাধিক মামলার পলাতক আসামী বিলাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান কুখ্যাত সন্ত্রাসী কুদ্দুস বেপারী ওরফে বোমা কুদ্দুস (৫৩) ও তার প্রধান সহযোগী ফারুককে (২৯) গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে র্যাব-১০ এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ডিএমপি ঢাকার পল্টন থানাধীন শান্তিনগর এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
র্যাব জানায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানধীন বিলাসপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ওরফে বোমা কুদ্দুস উক্ত এলাকায় আধিপত্য ও দলা-দলিকে কেন্দ্র করে পূর্ব সত্রুতার জের ধরে কুদ্দুসের নেতৃত্বে কুদ্দুসসহ তার শতাধিক সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একই এলাকায় বসবাসকারী ভিকটিম মোঃ সজিব মুন্সিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গত ২৬ মার্চ সজিবের বাড়ীতে গিয়ে তাকে না পেয়ে সজিবের বাড়ীতে ভাংচুর করে চলে আসে। পরদিন সজিব বিলাশপুর বাজার জামে মসজিদ হতে তারাবির নামাজ পড়ে বাড়ী ফেরার পথে জাজিরা থানাধীন বিলাসপুর ইউনিয়নের মিয়াচান মুন্সী কান্দি গ্রামের ভাঙ্গী ব্রিজের পাশে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্র পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা কুদ্দুস সহ তার আনুমানিক ৮০-৯০ জন সহযোগীরা মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র (রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, ককটেল বোমা, লাঠি-সোটা ইত্যাদিসহ) সজ্জিত হয়ে সজিবের উপর অতর্কিত আক্রমন করে।
এতে তাদের হাতে থাকা ককটেল বোমা সজিবের পেটে নিক্ষেপ করার ফলে সজিবের পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসে। অতঃপর সজিবের হাত, পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত ও পোড়া ঝলসানো জখম করে এবং তাদের কাছে থাকা চাইনিজ কুড়াল, রাম দা দিয়ে কুপিয়ে সজিবের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত কাটা জখম করে। এছাড়াও তাদের হাতে থাকা লোহার রড, লাঠি-সোটা ইত্যাদি দিয়ে পিটিয়ে সজিবের শরীরের বিভিন্ন স্থানে লীলা ফুলা জখম করে।
মারধরের একপর্যায়ে সজিবের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে কুদ্দুসসহ অন্যান্য আসামীরা উক্ত স্থানে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। উক্ত ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ভিকটিম সজিবকে গুরুতর ও রক্তাক্ত আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক সজিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সজিবকে উক্ত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গত ২ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৭টা ৪৫ মিনিটে সজিব উক্ত হাসপাতালে চিবিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় মৃত ভিকটিম সজিবের ভাই সুমন মুন্সি বাদী হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় চাঞ্চল্যকর সজিব মুন্সিকে নৃশংসভাবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত কুদ্দুস সহ ৬৫ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৪, তারিখ-০৫/০৪/২০২৪ খ্রি, ধারা-১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/ ৩০৭/৩০২/৩৪/১১৪ পেনাল কোড-১৮৬০ তৎসহ বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইন ১৯০৮ এর ৩/৪/৬ পেনাল কোড ১৮৬০।
র্যাব আরও জানায়, মামলা রুজুর পর গত ২২ এপ্রিল আসামী কুদ্দুস উক্ত হত্যা মামলা হতে হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করে। পরবর্তীতে গত ২৫ এপ্রিল দুপুর আনুমানিক ২টায় আসামী কুদ্দুস তার শতাধিক সহযোগীদের নিয়ে ককটেল বোমাসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মৃত সজিবের প্রতিবেশী একই এলাকার বাসিন্দা দ্বীন ইসলাম (৩২) এর বাড়ীতে গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ করে ত্রাস সৃষ্টি করে দ্বীন ইসলাসহ তার পরিবারের ৬-৮ জন সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে।
অতঃপর দ্বীন ইসলামের বাড়ী ও তার ভাইয়ের বাড়ীতে ব্যাপক ভংচুর করে বিভিন্ন মালামাল এবং গরু ও ছাগল লুটসহ বাড়ীর আশপাশের একাধিক গাছপালা কেটে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদর্শন করে পুনরায় ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে উক্ত স্থান হতে চলে যায়। উক্ত ঘটনার পর ভিকটিম দ্বীন ইসলাম জাজিরা থানায় আসামী কুদ্দুস সহ ৭৬ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নম্বর-০৭ তারিখ-০৪/০৭/২০২৪ খ্রি.;ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৪২৭/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/১১৪/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ তৎসহ বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইন ১৯০৮ এর ৩/৪।
পরবর্তীতে গত ৫ আগস্ট দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর আসামী কুদ্দুস সহ অন্যান্য আসামীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মোগোপন করে থাকে।
বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল হত্যা মামলাসহ উল্লেখিত মামলায় পলাতক সকল আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী বোমা কুদ্দুস তার নেতৃত্বে তার সহযোগীদের মাধ্যমে উক্ত এলাকায় চুরি, ছিনতাই, সম্পদ লুট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও হত্যাসহ বিভিন্ন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করত। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত কুদ্দুসের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলাসহ ৪১টি মামলা এবং গ্রেফতারকৃত ফারুকের বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় হত্যা মামলাসহ ২০টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে র্যাব জানিয়েছে।