আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে নাম প্রস্তাব করেছে নিবন্ধিত ৪৭টি দলের মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দল। এসব প্রস্তাবিত নামের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) হওয়ার দৌড়ে সব থেকে বেশি এগিয়ে রয়েছে সাবেক সচিব শফিকুল ইসলাম। এছাড়া নতুন ৫ জনের ইসিতে একজন নারী কমিশনার এবং একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে কমিশনার হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র।
জানা যায়, পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল পাঁচের বেশি নাম প্রস্তাব করেছে। তবে নাম প্রস্তাবের পাশাপাশি সিইসি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনের সুপারিশ করেছে দুটি রাজনৈতিক দল। গত বৃহস্পতিবার ছিল ইসি গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাবের শেষ দিন। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আবদুর রশিদের কাছে নিজেদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। পাঁচ সদস্যের কমিশনের জন্য প্রতিটি পদে দুজন করে মোট ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছে বিএনপি। গত বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে নাম জমা দেন।
বিএনপি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য দলটি সাবেক সচিব এএমএম নাসির উদ্দিন ও শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত তালিকায় একজন নারীসহ সাবেক বিচারপতি, সাবেক আমলা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক এই জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করেছে। জোটের অন্যতম শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে সাতটি নাম প্রস্তাব করলেও দলটি সিইসি হিসেবে আবু আলম শহীদ খানের নাম প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে।
সিইসির পাঁচ পদে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোও। এছাড়া ইসি গঠনে আটজনের নাম প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামী। তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে গণ অধিকার পরিষদ। এদিকে ইসি গঠনে পাঁচজন করে নাম প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
তবে সিইসি হিসেবে কারো নাম সুপারিশ না করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনের সুপারিশ করেছে দল দুটি। সিপিবির প্রস্তাবের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে সুপারিশসংবলিত চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে কমিশনারদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের প্রস্তাবিত কমিশনাররা দক্ষ ও বিজ্ঞ। তারা কমিশনার হলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিইসি নির্বাচন করবেন। সিইসি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনের সুপারিশ জানিয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ২০২২ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যখন আইনটি করলেন তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা এখনো বলছি, কমিশনাররাই গণতান্ত্রিকভাবে সিইসি নির্ধারণ করবেন। এর আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাব করতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি জুবায়ের ছাড়াও এই কমিটিতে প্রধান বিচারপতি মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান।
আইন অনুযায়ী, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং সরকারি কর্মণ্ডকমিশনের চেয়ারম্যান (পিএসসি) মোবাশ্বের মোনেম পদাধিকার বলে সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন। আর রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে সার্চ কমিটিতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মণ্ডকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম। বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
সার্চ কমিটির ছয় সদস্য: বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, মো. নূরুল ইসলাম, মোবাশ্বের মোনেম, চৌধুরী রফিকুল আবরার ও জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ’ আইন, অনুযায়ী সার্চ কমিটি যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। আইনে বেধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম জমা দেবে এই কমিটি। সেই তালিকা থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তাদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।