অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে, এমনকি আরও কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) ফাঁকে এই সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (১৭ নভেম্বর) এই ভিডিও সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি।
ড. ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের সঠিক সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "না, আমার মাথায় এমন কিছু নেই।" তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে—এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা অন্তর্বর্তী সরকার, স্থায়ী সরকার না। নিয়মিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর হয়ে থাকে। নতুন সংবিধানে সম্ভবত সরকারের মেয়াদ চার বছর হতে পারে, কারণ মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। সুতরাং, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অবশ্যই চার বছরের কম হবে, এটি নিশ্চিত। এটা আরও কমও হতে পারে, তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে মানুষের কী চাহিদা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কী মতামত তার ওপর।" তিনি আরও বলেন, "যদি রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে যে, সংস্কার প্রক্রিয়া ভুলে গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, তাহলে সেটাও করা হবে।"
ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে চার বছর দায়িত্বে থাকবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, "আমি চার বছর থাকার কথা বলিনি। আমি বলেছি, এটা সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে, তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা।"
চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, "পুরো সরকার ব্যবস্থা সংস্কার হবে। মানুষ নতুন কিছু চায়, আর সেখানে সব ক্ষেত্রেই সংস্কার করা হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি প্রক্রিয়া একসাথে চলছে—একটি হচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতি, আর অন্যটি হচ্ছে সকল সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার প্রস্তুতি।
ড. ইউনূস বলেন, "সারাদেশ নতুন কিছু চায়, আর নতুন বাংলাদেশ শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে জানতে চাইছি, তারা কি এখনই নির্বাচনে যেতে চায় নাকি সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া আগে নির্বাচন চান।" তিনি নিশ্চিত করেন যে, সমস্ত সিদ্ধান্ত জনগণের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে ভারতের কাছে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও ওঠে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, "তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের মধ্যে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য ভালো নয়। তাই ভারতকে এসব বিষয়ে বলার প্রয়োজন আছে। ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু যদি এই ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের কাছে আবার অভিযোগ করা হবে।"
আবা/এসআর/২৪