‘বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এজন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হতে হবে।’ এমন প্রলোভন দেখিয়ে রাজধানীর শাহবাগে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশের চেষ্টা করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগ উঠেছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে। কথিত সেই সমাবেশে নেওয়ার জন্য কমলনগর উপজেলার ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীকে একত্রিত করা হয়।
এ ঘটনায় রাতেই স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে ৩টি চেয়ারকোচ বাস ও ৪টি মাইক্রোবাস জব্দ করে। এ সময় ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি সারাদেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোকে টার্গেট করে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে সেগুলো বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এর বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জনপ্রতি এক হাজার করে টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা।
বাসযাত্রী নারী-পুরুষরা জানায়, একটি চক্র সোমবার ঢাকার শাহবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা এক হাজার টাকা করে নিয়েছে। ঋণপ্রত্যাশী ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে দেওয়া হবে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ।
আলেয়া বেগম নামে এক নারী জানান, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা শাহবাগে একটি সমাবেশে যোগ দিতে লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।সেখানে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিকট তারা প্রস্তাব দেবেন। ওই টাকা থেকে তাদের মতো গ্রামের নারী-পুরুষদের ১ লাখ থেকে বড় অংকের টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
করইতলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ আলম বলেন, ৫ আগস্টের কয়েক দিন পর থেকে একটি চক্র গ্রামের মানুষদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার নাম করে সংগঠিত করছিল। ঘটনার সময় সেই চক্রের আহ্বানে ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ ঢাকায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।
তোরাবগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ নাছিমা ও রৌশন বেগম জানান, গাড়ি ভাড়া হিসেবে তিনি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও অনেকের কাছ থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে স্থানীয় সংগঠকরা।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৩টি বাস ও ৪ টি মাইক্রোবাস জব্দ আছে। তবে মূল হোতাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তারা ঢাকায় আছে। মাঝে মাঝে এসে ফরম পূরণ করে চলে যায়। তারা এখানকার হতদরিদ্র মানুষদেরকে ১ হাজার টাকায় সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে। এতে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন সমাবেশ করতে চেয়েছিল। ডিএমপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো সমাবেশ হয়নি, হবেও না।
আবা/এসআর/২৪