অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে। আসুন দেশবিরোধী এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমরা একজোট হই।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একত্রে সংলাপে বসার উদ্দেশ্য নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘একসঙ্গে বসার মাধ্যমে সারা দুনিয়াকে আমরা জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের ঐক্য মজবুত আছে। এ জাতি মরেনি, দুর্বল হয়নি। সবল আছে।’
ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য করে অধ্যাাপক ইউনূস বলেন, ‘তারা গণঅভ্যুত্থানকে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হিসেবে দেখাতে চাইছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হয়ে গিয়েছে, সেই ভয়ংকর কাণ্ড থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে চায়। তাদের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাস্তবকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে।’
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এই বিরাট অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা একে মুছে দিতে চায়। আড়াল করতে চায়। এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এখানে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে, তা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এই স্বাধীনতা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার শক্তি কারও নেই। যে যত ষড়যন্ত্র করুক, যত অপপ্রচার করুক, যত কিছু করুক- আমাদের কাছ থেকে এটা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কারণ, আমাদের রক্ত এখনো শুকায়নি। আমাদের দেওয়ালে দেওয়ালে যে লেখাগুলো আছে, সেগুলো পড়েন। সেগুলো এখনো মুছে যায়নি। তকতক করছে। সেটা আমাদের বুকেও তকতক করছে। কাজেই আমরা সেই শক্তিমান জাতি, যারা লড়াই করবে।’
সরকারের আহ্বানে সংলাপে অংশ নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কেন জানি ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারছি না। আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জগদ্দল পাথর সরাতে পারলাম, এ নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে, নানা জায়গা থেকে এটাকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে কত রকমভাবে তা এসেছে, আপনারা বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো দেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে মনে করেছিলাম দুর্গাপূজা আসছে, এটা নিয়ে একটা হাঙ্গামা শুরু হবে। সেখানে আমরা ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম, সবাই সেই ঐক্যের মধ্যে শরিক হয়েছিলেন। সারাদেশজুড়ে খুব শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে, আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম।’
বৈঠকে আরও অংশ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমার ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ চারজন; খেলাফত মজলিসের আমির আব্দুল বাসিদ আজাদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম; জমিয়তে উলামে ইসলামের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ইউসুফি ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেনদিসহ অনেকে।
আবা/এসআর/২৪