দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা গবেষণা ও সংবাদমাধ্যমে এত দিন যা দেখে এসেছি এবং দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেই ধরনের তথ্য পাচ্ছি-সেটি অত্যন্ত বিব্রতকর। যা এত দিন শুনেছি বা জেনেছি, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি অনিয়ম, অনাচার, বৈষম্য, দুর্নীতি দুদকের অভ্যন্তরে রয়েছে।’
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
‘এ সব বলতে বিব্রত বোধ হচ্ছে’ উল্লেখ করে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘এক দিকে দুদক দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হলে, সাঁড়াশি অভিযান ছাড়া কোনো উপায় নাই।’
তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের জন্য যেসব ক্ষেত্র এ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে, তার শীর্ষে রয়েছে দুদক। দুদক সংস্কারে কার্যক্রম চলছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার একটি অবমাননাকর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদক সংস্কারের প্রয়োজন হবে কেন? দুদক তো দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। এই প্রতিষ্ঠানে যারা নিযুক্ত হন, হোক না রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত হয়েছেন! আপনি যেই মুহূর্তে দুদকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন, আপনার মনে কেন এই বোধটা জন্মায় নাই যে, আপনার দায়িত্ব হচ্ছে দুর্নীতি দমন করা। আপনি কেন দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। এই প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কেন হবে। এর চেয়ে বড় অবমাননাকর দৃষ্টান্ত দুদকে আর কী হতে পারে!’
তিনি বলেন, এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা কথা বলছি, যখন কমিশন নেই। তিনজন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাই তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।
কমিশনের পদত্যাগের মাধ্যমে দুদকে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে জানিয়ে সংস্কার কমিটির প্রধান বলেন, ‘একটা উভয়সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে। কেন না দুদক এমন একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। প্রায় দেড় ১ মাস হয়েছে কমিশনে কোনো সিদ্ধান্ত নাই। যাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না আইনগতভাবে।’
সংস্কার কমিশনের প্রধান অগ্রাধিকারই হলো কমিশন গঠন করা উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংস্কার কমিশন যে পরামর্শ দেবে, তার সঙ্গে যদি দুদক কমিশন নিয়োগ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে আমরা আবার সেই একই অবস্থায় চলে যাব। একই চক্রে কি আমরা আবার পড়ে যাব? এই যে উভয়সংকটের সমাধান সরকারকে করতে হবে। কেন না এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সরকারের উদ্যোগে। কোন পথটা ভালো হবে সেটা সরকার ঠিক করবে।’
বিশেষ ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, এর মধ্যে দুদকের একটা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। যার মাধ্যমে দুদককে ন্যূনতম অপারেশনাল জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। যত দিন পর্যন্ত দুদক সংস্কার কার্যক্রম চালু হয়, তত দিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। আমরা যেন আবার একই চক্রে আবদ্ধ হয়ে না পড়ি।’