রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১০ জানুয়ারি রাতে ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত মুখ ঢেকে, হেলমেট পরে এ হামলা চালায়। পরে ভাইরাল হয় চাপাতি দিয়ে কোপানোর একটি ভিডিও। ঘটনার পর সামনে এসেছে ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া অপরাধ জগতের শীর্ষ দুই মাফিয়ার নাম।
এ ঘটনার মূল টার্গেট ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপু। তিনি একজন কম্পিউটার ব্যবসায়ী। কিন্তু ভুলক্রমে হামলাকারীরা ব্যবসায়ী এহতেশামুলকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় অন্য আসামিদের পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ওরফে ইমনকে (৫২) আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার সহযোগী হিসেবে খোকনের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ হামলার নেপথ্যে মাল্টিপ্লান এবং আশপাশের ব্যবসায়ীদের গড়া সমিতির দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব। এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসীর লোকজনদের চাঁদাবাজিও রয়েছে এই হামলার নেপথ্যের কারণ। এহতেশামুল ও দিপু তাদের চাঁদাবাজিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলার নেপথ্যে রয়েছে এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব। যারা জেলে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন অপরাধ জগৎ।
নেপথ্যে দুই সন্ত্রাসীর দখলদারিত্ব
জানা গেছে, মাল্টিপ্লান ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠনে গত ১৫ বছর ঢালাওভাবে চাঁদাবাজি হয়েছে। আর এসব করেছেন সমিতি দুটির সাবেক নেতারা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট ছিল। কিন্তু কেউ মুখ খুলত না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও আশরাফুল হক ইমনের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছিল। গত ১৫ বছর ইমনের মনগড়া লোকজন দিয়ে দুটি সংগঠন চলেছে। চলত ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি। তার সিংহভাগই পেতেন ইমন ও তার লোকজন। কিন্তু সেই কামাইয়ে ঘি ঢেলে দেয় ৫ আগস্ট। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর নতুন নেতৃত্ব আসে। এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি পদে বসানো হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপুকে। কিন্তু বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না ইমন। ফলে গত তিন মাস আগে দিপুকে ফোনে নেতৃত্ব ফিরে পেতে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
মামলার বাদী ওয়াহিদুল হাসান দিপু ঢাকা মেইলকে বলেন, হামলাকারীদের চেনা যায়নি। কারণ তারা বেশির ভাগ ভাড়াটিয়া ছিল।
আর মূলত চাঁদাবাজির জন্যই এই হামলা। এই হামলায় ইমন ও তার লোকজন জড়িত। এটা আমার ভাষ্য নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বলেন। ইমন গত ৫ আগস্টের পর আমাকে হুমকি দিয়েছিল। তখন আমি কোনো জিডি করিনি।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, তখন আমাকে হুমকি দিয়ে ইমন বলেছিল, তার লোকজন কাজ করবে, আমি যাতে কোনো বাধা না দিই।
জানা গেছে, ওয়াহিদুল হাসান দিপু বর্তমানে এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও ই.সি.এস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্লান সেন্টার) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। পাশাপাশি তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই।
আবা/এসআর/২৪