নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন

একের পর এক কারখানা বন্ধ, বাংলাদেশের শিল্পখাতে অশনিসংকেত

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে ক্রমবর্ধমান সংকটের প্রতিফলন হিসেবে ২০২৪ সালে একাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। 

বিশেষত, গাজীপুরে কেয়া গ্রুপের চারটি গার্মেন্টস স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করার পর, কয়েক হাজার কর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। ২ জানুয়ারি কেয়া গ্রুপের শ্রমিকরা জানতে পারেন তাদের চাকরি আর থাকছে না। ২৯ ডিসেম্বর থেকেই এসব শ্রমিক কাজে বিরত ছিলেন, কারণ নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি।

কেয়া গ্রুপ কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি, কাঁচামালের ঘাটতি এবং কার্যাদেশের সংকট। একই দিনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেয়া গ্রুপের কর্ণধার আব্দুল খালেক পাঠানসহ কয়েকজন ব্যাংকারের বিরুদ্ধে ৫৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।

শুধু কেয়া গ্রুপ নয়, ২০২৪ সালে অন্তত ১০০টি গার্মেন্টস কারখানা পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়েছে। 

বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, গত বছর প্রথম সাত মাসে ৪৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে গ্যাস সংকট, ব্যাংক সহায়তার অভাব এবং শ্রমিক অসন্তোষ আরও ৩২টি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

বেক্সিমকো গ্রুপ, দেশের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তাদের ১৫টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া এস আলম গ্রুপ তাদের নয়টি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।


২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ১.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ শতাংশ। একই সময়ে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থেকে কমে ১.৪ শতাংশ হয়েছে।

ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “কারখানা বন্ধ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

বিজিএমইএ এবং নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতারা জানান, বিদেশি ক্রেতাদের পেমেন্ট আটকে রাখা, ব্যাংকিং সংকট এবং শ্রমিক অসন্তোষ কারখানা বন্ধের প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, “গাজীপুর, আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জে অনেক কারখানা কার্যক্রম বন্ধ করেছে, যা হাজার হাজার শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছে।”