মির্জা ফখরুলের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ১/১১ গঠনের ইঙ্গিত: উপদেষ্টা নাহিদ

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

‘অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু বিষয়ে নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারছে না’–বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্যে ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেখছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। 

বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি এ কথা লেখেন।

নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।’ 

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আসাদের ৫৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু বিষয়ে নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারছে না। 

সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে: মির্জা ফখরুলসরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু যৌক্তিকতা রয়েছে অথচ এ দাবিকে বিতর্কিত করতে চায় অনেকে। দেশের মানুষ ১৫ বছর ধরে ভোটের অপেক্ষায় আছে। দ্রুত ভোট না হলে সংকট আরও বাড়তে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সব দল ও মানুষের সমর্থন রয়েছে। তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছ, তখন আমাদের আপোষকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)। আমরা ৩ আগস্ট থেকে বলে আসছি আমরা কোনো প্রকারের সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নিবো না। আমাদেরকে বারবার ক্যান্টেন্টমেন্টে যেতে বলা হলেও আমরা যেতে অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিং এর মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজী হয় নাই। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলছে সামনের নির্বাচনের পরে।’ 

সরকার বেশ কিছু বিষয়ে নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারছে না: মির্জা ফখরুলসরকার বেশ কিছু বিষয়ে নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারছে না: মির্জা ফখরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নিবে না। এবং আমি মনে করি এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আর এই সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।’

বিএনপির সমালোচনা করে উপদেষাটা নাহিদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলা কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবী ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই না যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমান ছাড় দিবো।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারি নাই এত হত্যা ও অপরাধের পরেও। হায় এই 'জাতীয় ঐক্য' লইয়া আমরা কি রাষ্ট্র বানাবো! বাংলাদেশ কে দুর্বল করা সহজ কারণ বাংলাদেশকে সহজেই বিভাজিত করা যায়। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।’

উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘আমি মনে করিনা সমগ্র বিএনপি এই অবস্থান গ্রহণ করে। বরং বিএনপির কর্মী সমর্থকদের বড় অংশই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চায়।বিএনপির দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে আহবান করব, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে ছাত্র-জনতার সাথে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির পথ বেছে নিন।’