দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ) মাসুদুল হক এক ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকদের অন্যান্য দাবি চলতি বছর থেকে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণাও দেন যুগ্ম সচিব। তিনি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলা অনুমোদনের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এরপর অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা। তাদের কেউ কেউ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
অবশ্য চলতি বছরের জুনের মধ্যে এসব দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলে জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
এর আগে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনরত শিক্ষকরা। নির্ধারিত সময়ে দাবি না মানলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দেয় তাঁরা।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন এই আল্টিমেটামের সিদ্ধান্ত জানান।
অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘অসহায় শিক্ষকদের ওপর টিয়ার গ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড কেন? ৫ আগস্টের পর টিয়ার গ্যাসের কবর দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসে ব্যাখ্যা দেবেন কেন এই লাঠিচার্জ হলো। এটা না করলে শাহবাগ থানা ঘেরাও হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।’
এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা কি এই লাঠিপেটা দেখেননি? পুলিশ কীভাবে এই লাঠিচার্জ করে?’
এসময় আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা আব্দুল হান্নান হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল (রোববার) সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা বলেছেন আজকে দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছি। যদি আজকের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সুরাহা না করে তাহলে সামনে বড় আন্দোলনের ডাক আসতে পারে।’
গত রোববার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ৬ দফা দাবিতে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে বহু শিক্ষক আহত হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশের আলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। তারা স্মারকলিপি দিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করে। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পাশাপাশি লাঠিচার্জও করা হয়।
ইবতেদায়ী শিক্ষকদের ৬ দাবি–
১। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নিবন্ধন স্থগিতাদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা।
২। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদরাসাগুলো বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্তকরণ।
৩। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার আলাদা নীতিমালা।
৪। পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন।
৫। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া।
৬। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেওয়া।