ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘যুবলীগ’ আত্মপ্রত্যয়ী যুবকদের মানবিক পাঠশালা

‘যুবলীগ’ আত্মপ্রত্যয়ী যুবকদের মানবিক পাঠশালা

অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির শ্রেষ্ঠ দার্শনিক বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বহুবিধ প্রতিভার অধিকারি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি আদর্শিক চেতনায় যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যাবস্থায় সদ্যস্বাধীন বাংলার যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। সেই থেকে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্য এবং সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গৌরবময় ৪৮ বছরে পদার্পন করেছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আধুনিক কাঠামোয় পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আত্মপ্রত্যয়ী প্রগতিশীল যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে একটি যুবসংগঠন প্রতিষ্ঠা ছিলো সময়ের দাবি। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে পুনঃনির্মাণের কাজে বাঙালিরা ছিল দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ। ঠিক তখনই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মোড়কে জাসদ সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে দেশের যুবসম্প্রদায়ের বৃহৎ একটা অংশকে বিপথগামী করা চক্রান্ত শুরু হয়। সমাজকে বিশৃংখল করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কায়েমসহ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আবারো হুমকির মুখে পতিত করার নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলো স্বার্থান্বেষী একটি চিহ্নিত মহল।

এমন প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের পরামর্শে ও প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় দেশের যুবসমাজকে সুসংগঠিত সুশৃংখল যুবশক্তিতে পরিণত করতে শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৭২ সালে ১১ নভেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রখর রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন ডায়নামিক যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে সেই থেকে মানবিক যুবলীগের পথচলা।

শেখ ফজলুল হক মনি ৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ছিলেন শেখ মনি। রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতায় ব্যাপক খ্যাতিলাভ করেন। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় রণাঙ্গনের অন্যতম সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী। শেখ ফজলুল হক মনি ব্যক্তি জীবনে দুই পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস শেখ মনির গর্বিত উত্তরাধিকার। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট, সেই নারকীয় হত্যাকান্ডে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি শাহাদাৎ বরণ করেন। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণসহ তাদের রূহ এর মাগফিরাত কামনা করছি।

পিতার আদর্শিক চেতনায় যুবলীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দের্শ্যকে সামনে রেখে দেশপ্রেম ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় মানবিক যুবলীগের সুখ্যাতি অর্জনে সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ সর্বাধিক মনোনিবেশ করেছেন। অর্থাৎ অতীতের সকল অনাকাঙ্খিত বিতর্ক পেছনে ফেলে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ মনির প্রতিষ্ঠিত যুবলীগ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বেগবান থাকবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গত এক বছরে মানবিক কর্মকান্ডের মধ্যদিয়ে যুব-রাজনীতিকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন পরশ-নিখিল পরিষদ। তাদের প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের যুবলীগ নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে সারা দেশে যুবলীগের মানবিক কর্মকান্ড দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সামথ্য হয়েছে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস্ পরশের নির্দেশনায় মাঠপর্যায়ে সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করেছেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। মানবিক কাজে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করায় সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জাতীয় সংসদে যুবলীগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সাংগঠনিক নেত্রীর এমন অনুপ্রেরণায় যুবলীগকে আদর্শিক জায়গায় ফেরাতে আরো দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সংগঠনের শীর্ষ এই দুই যুবনেতা। সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমে অসহায়-দুস্থ জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তারা। শুরুতেই শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে যান শীতার্ত জনসেবায়। প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ দেশের যেকোন সংকট মোকাবিলায় মানবিক যুবলীগ এখন পীড়িত মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।

একইভাবে করোনা সংকটকালীন মানবিকতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত অব্যাহত রেখেছে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী যুবলীগ।

গত ২৬ মার্চ দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করে কর্মহীন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস্ পরশ। সেই লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে মানবিক এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এসময় বিভিন্ন শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, সবজি, দুধ) ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চল্লিশ লাখের বেশি মানুষকে খাদ্যসহায়তা এবং করোনা ভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও সাবান পৌঁছে দেয়া হয় প্রায় এক কোটি জনসাধারনের দোরগোড়ায়।

এছাড়া করোনায় আক্রান্তে মৃতব্যাক্তির লাশ দাফনে এগিয়ে আসে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। শ্রমিক সংকটে অসহায় কৃষক পরিবারের ধান কাটা কর্মসূচি ছিলো মানবিক যুবলীগের অনন্য নিদর্শন। করোনা সংকটকালীন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যা প্লাবিত অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবিলায় যুবলীগ নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ সতর্কতাসহ জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে মানবিক যুবশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ যুবরাজনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনা যুবজাগরণ সৃষ্টি করতে সামথ্য হয়েছে।

পিতা শেখ ফজলুল হক মনি যে ডায়নামিক যুব-সংগঠনের বীজ বপন করেছিলেন; আটচল্লিশ বছর পর তারই সুযোগ্য উত্তোরাধিকার শেখ ফজলে সামস্ পরশের হাত ধরে “মানবিক যুবলীগ” আজ বাংলার ঘরে ঘরে গরীব-দুঃখি মানুষের শেষ ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে। যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির গর্বিত সন্তান বর্তমান যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ পরশ এবং তার সুযোগ্য সহযোদ্ধা বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রাজনৈতিক দৃঢ় সংকল্পে যুবলীগ আজ মানবিক সংগঠন হিসেবে সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রত্ন চিনতে ভুল করেননি। তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ বর্তমান মানবিক যুবলীগের উদ্ভাবক দুই যুবরত্ন শেখ ফজলে সামস্ পরশ এবং মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এই দুই প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিকের হাতধরে মানবিক যুবলীগের আবির্ভাব দেশের তরুণ যুবসমাজ ও প্রজন্মের জন্য ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনন্য উপহার। মানবিকতার এইধারা অব্যাহত রেখে আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ যুবসম্প্রদায়ের মানবিক পাঠশালা হবে যুবলীগ। এই প্রত্যাশা রেখে ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সফলতা কামনা করছি। মুজিববর্ষে যুবলীগের পক্ষে মানুষের শ্রদ্ধা ও সম্মানকে ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন প্রতিটি কর্মি। যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার অাস্থা ও ভালোবাসার ভ্যানগার্ড হবে যুবলীগ। এই বিশ্বাস আর প্রত্যয় সকলের। শুভ বাংলাদেশ জন্মদিন যুবলীগ।

লেখক- সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর।

যুবলীগ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত