গণমিছিল

আওয়ামী লীগ এবারও পাহারায় থাকবে

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

আজ ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির গণমিছিলকে সামনে রেখে এবারও রাজধানীতে পাহারায় থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজধানী ঢাকার অলিগলি, পাড়া-মহল্লা, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ এলাকাভিত্তিক পাহারা দেবেন দল ও তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা জুমার পর ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় সতর্কভাবে পাহারা দেবেন। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বাদ জুমা শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকবে কঠোর নজদারিতে।

দলীয় সূত্র জানায়, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। অবস্থান নেবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামলী, ফার্মগেট, মিরপুর, গাবতলী, শাহবাগ, পল্টন, নয়াপল্টনের আশপাশে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, জজ কোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পাহারায় থাকবেন। 

এ ছাড়া বিএনপির গণমিছিলকে সামনে রেখে আজ রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাদ জুমা শান্তি সমাবেশ রয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। 

এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর শ্যামলীতে জুমার পর অনুষ্ঠিত হবে শান্তি সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। এ ছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৭টি স্পট উত্তরা, মহাখালী, ফার্মগেট, বাড্ডার ইউলুপ, গাবতলী ও মিরপুর-১০-এ শান্তি সমাবেশ করবে উত্তর আওয়ামী লীগ।

এ ছাড়া বিএনপি গণমিছিলের নামে যাতে কোনো সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য বৃহস্পতিবার বর্ধিত সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। এ সভা থেকে প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পাহারায় থাকে। বিএনপি গণমিছিলের নামে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সমুচিত জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় সভা থেকে।

এ সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি ৩০ ডিসেম্বর কর্মসূচির নামে অশান্তি করলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আমরা পায়ে পাড়া দিয়ে কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। তাদের কর্মসূচি তারা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যদি কর্মসূচির নামে আবার সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, অশান্তিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাহলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না। তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থান করব। গত ১০ ডিসেম্বর যেমন শান্তিপূর্ণভাবে ছিলাম।

তিনি বলেন, খেলাফত আন্দোলনকারী, জামায়াত, আমাদের হুজুরেরা জুমার নামাজের পর কর্মসূচি দেন। জুমার নামাজ শেষ করে তারা তুলকালাম করার চেষ্টা করেন, এটাই দেখে এসেছি। ইসলামি দলগুলো ছাড়া অন্য কেউ জুমার পর কর্মসূচি দিয়েছেন এমনটি আমার জানা নেই। বিএনপি বাদ জুমা যে কর্মসূচি দিয়েছে, এটাই তাদের খারাপ উদ্দেশ্য। তারা বিভিন্ন মসজিদ থেকে বের হবে, বিভিন্ন জায়গায় তারা গোলমাল সৃষ্টি করবে।

এ সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যতদিন সরকার, সেই সরকারের পাহারাদার হলো আওয়ামী লীগ। বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে ৩০ ডিসেম্বর সরকারের পতন ঘটাতে। তারা যদি সরকারের পতন ঘটানোর কোনো কর্মসূচি নিয়ে থাকে তাহলে আমরাই পাহারাদার হিসেবে সরকারকে পাহারা দেব। তাদের গণমিছিল ছিল ২৪ ডিসেম্বর। সেদিন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ছিল। দলের সাধারণ সম্পাদক আহ্বান জানিয়েছিলেন তারিখ পরিবর্তনের। তারা পরিবর্তনও করেছে। সেই তারিখ পরিবর্তনের মধ্যেই একটা রহস্য খুঁজে পেয়েছি এবং ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছি। যারা রাজনীতি করি, শুক্রবার কোনো কর্মসূচি পারতপক্ষে দিই না। কিন্তু তাদের পরিবর্তিত তারিখ দিয়েছে শুক্রবার। তাদের সঙ্গে আছে জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের মতো বড় ষড়যন্ত্রকারী দল। সেই কারণে এই কর্মসূচি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। তারা এখন আর গোপনে ষড়যন্ত্র করছে না, প্রকাশ্যেই করছে। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে সরকারের পতন ঘটাবে। তারা যে ষড়যন্ত্র করছে, তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। তারা ক্ষমতা দখল করবে, আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা আঙুল চুষব এটা ভেবে থাকলে তা হবে ভুল।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর আমাদের নেতাকর্মীরা যেভাবে অবস্থান নিয়েছিল, ৩০ ডিসেম্বরও সেভাবে রাজধানীতে পাহারায় থাকবে। বিএনপি দেশে অরাজকতা করবে, আমরা তো বসে বসে তামাশা দেখতে পারি না। এ জন্যই আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তারা কোনো সহিংসতা করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা গত ১০ ডিসেম্বর নৈরাজ্য করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা পারেনি। ৩০ ডিসেম্বরও গণমিছিলের নামে কোনো সহিংসতার সুযোগ দেওয়া হবে না। প্রতিবাদ নয়, তাদের প্রতিহত করা হবে। যেই হাতে আগুন দিতে আসবে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফী গণমাধ্যমকে  বলেন, ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের নামে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিরুদ্ধে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী নেতাকর্মীদের থানা, ওয়ার্ড, ইউনিট, পাড়া ও মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় শান্তি সমাবেশ করব। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা নির্দেশ দিয়েছি, প্রত্যেক নেতাকর্মী যেন ১০ ডিসেম্বরের মতো ৩০ ডিসেম্বরও মাঠে থাকে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ পাড়া-মহল্লায় নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে। পাশাপাশি রাজধানীর ৭টি স্পটে আমাদের নেতাকর্মীরা থাকবে। এ ছাড়া শ্যামলী স্কয়ারে শান্তি সমাবেশ হবে জুমার পর। কেউ নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে জবাব দেবে।