অনন্য নেতৃত্বের ১৪ বছর

সাফল্যের পাল্লাই ভারী শেখ হাসিনার

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা / ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য। ২০০৯ সাল থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। এ ১৪ বছরে অর্থনীতিসহ সব সূচকেই রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। নানামুখী উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ রোল মডেল। নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতা, অনাকাক্সিক্ষত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক প্রভাব, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু উত্তাপ-বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বে কেটেছে ১৪ বছর।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের টানা তৃতীয় দফা সরকারের আজ ৬ জানুয়ারি চার বছর পূর্ণ হলো। পঞ্চম বছরে পা রাখছে সরকার। চলমান বছরটি জাতীয় নির্বাচনের বছর। সরকারের চার বছর পূর্তির দিনে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির তুলনামূলক বিবেচনা প্রাসঙ্গিক। একই সঙ্গে তৃতীয় মেয়াদে সরকারের ১৪ বছর পূর্ণ হলো। উন্নয়নের খতিয়ানে তৃতীয় দফায় গত চার বছরে সরকারের সফলতার পাল্লাই ভারী। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জন কোনো অংশে কম নয়।

অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠন : চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘটনাও সামাল দিয়েছে সরকার। গত জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। এতে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। তবে প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়গুলো তদারকির কারণে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে দেশ।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন : গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিকাল প্রযুক্তিসহ কয়লাভিত্তিক ১,৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন : স্বপ্নের পদ্মা সেতু গত ২৫ জুন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

মধুমতী সেতু উদ্বোধন : গত ১০ অক্টোবর নড়াইলে ছয় লেনের মধুমতী সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মেট্রোরেল উদ্বোধন : গত ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি : করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে অর্থনৈতিক সংকটেও বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসেবে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে ২৩৩ ডলার বেড়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় ব্যাপক কাজ করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই সময় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

বন্যা মোকাবিলা : সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা মোকাবিলায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এ সময় তিনি নিজে হেলিকপ্টারে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসনসহ দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন।

যোগাযোগে নতুন মাত্রা : গত বছরের ৭ নভেম্বর দেশের ২৫ জেলায় নবনির্মিত ১০০ সেতু এবং গত ২১ ডিসেম্বর দেশের ৫০টি জেলায় ২০২১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সম্মিলিত দৈর্ঘ্যরে ১০০টি সড়ক ও মহাসড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

চট্টগ্রামে বিএম ডিপোতে আগুন : গত বছরে ৪ জুন রাতে সীতাকু-ের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে এ কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় একের পর এক বিস্ফোরিত হয় ৪০০ কন্টেইনার। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নেভানো হয়। এ দুর্ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন সদস্যও রয়েছেন। শেখ হাসিনার তদারকিতে সেই সংকটও কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

সর্ববৃহৎ বাজেট : গত ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট।

গত ১৪ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ, যা ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। করোনাকালেও ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। ষষ্ঠ-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে অর্জিত গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সপ্তম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে তা বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

এদিকে জাতীয় সংসদ রাষ্ট্রীয় সব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে। বাজেটের আকার ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ১১ গুণের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

মিয়ানমার ও ভারতের সমুদ্রসীমা নিয়ে আইনি বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এলাকাভুক্ত সমুদ্রের অংশ, এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপানসহ মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর স্বত্বাধিকার লাভ করেছে। সমুদ্রের নীল জলরাশি ও তার সম্পদ আহরণে এ উন্মুক্ত অধিকারের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এ সুনীল অর্থনীতির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

নিম্নআয়ের দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত ধাপ অতিক্রম, রূপকল্প ২০২১-এ কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য ঘাটতি দূর করা এবং দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল তা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলছে। ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। 

গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নির্মাণ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু, উপজেলা শহরে ব্যাংকের এটিএম বুথ নির্মাণসহ সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান সহজ হয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ কোটির বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন ঘোষণা (এমডিজি) সফলভাবে অর্জন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে ২০০৯ সালে প্রতি লাখ সন্তান প্রসবে মাতৃ মৃত্যুহার ছিল ২৫৯ জন। সম্প্রতি সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ জনে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় করে বাংলাদেশ পায় ভারতের ১১১টি ছিটমহল। এ চুক্তির ফলে ৬৮ বছরের রাষ্ট্রহীন ছিটমহলের ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পায়। দেশ-বিদেশের অতিথিদের সরব উপস্থিতিতে সফলভাবে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে সাফল্য অর্জন করেছে সরকার। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের অসমাপ্ত বিচারকাজ শেষ ও আদালতের রায় কার্যকর করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শেষ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত বৈদেশিক নীতি- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, এ মূলমন্ত্র অনুসরণ করে চলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।