দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন জোট ঘোষণা করেছে ১৭টি দল। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির নেতৃত্বে ১৭ দল নিয়ে নির্বাচনী জোট ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ’ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছে।
এনপিপি’র চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুর সভাপতিত্বে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এ নির্বাচনী জোটের ঘোষণা করা হয়।
দলগুলো হলো- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ (ডিপিবি), বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-বিজিএ, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ নাগরিক কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টি (বিসিপি), গণমুক্তি পার্টি, বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন পার্টি, বাংলাদেশ ন্যায় বিচার পার্টি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ আইডিয়াল পার্টি এবং বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি।
লিখিত বক্তব্যে এনপিপি’র চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, এনপিপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা শান্তির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করি। মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিশ্বাস করি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে ১৭টি দল নিয়ে আমরা একটি নির্বাচনী জোট করলাম। যার নাম ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ’। গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেশের রাজনৈতিক গুনগত মান পরিবর্তন করা। গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ চায় সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি, সম্প্রীতির রাজনীতি, সাম্যের রাজনীতি, দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী রাজনীতি। আগামী নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনে অংশগ্রহণ করব।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দেশ ও জনকল্যাণের স্বার্থে ১৮ দফা দাবি তুলে ধরেন।
সেখানে বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে হবে।দাবিগুলোর ব্যাপারে বলা হয়, জ্বালানি মূল্যহ্রাস ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রথা বাতিল করা, জাতীয় স্বার্থে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি গণমাধ্যম এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল, মিটিং এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।এছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমাণ উন্নয়নে পরিকল্পনা মাফিক কর্মসূচী গ্রহণ করার কথা বলা হয় দাবিতে।
১৮ দফায় আরও ছিল, ঘুষ, দুর্নীতি, অপচয় ও সম্পদ পাচারকারীদের আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা । কৃষি উৎপাদন, বিপনন ও মূল্য নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও কৃষি পণ্যে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের কে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষীদের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কৃষকদের সমবায়ী ব্যবস্থা চালুকরা।শ্রমিকদের যথাসময়ে বেতন প্রদান, শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার পাশাপাশি বিশি মোতাবেক নারী শ্রমিকদের স্ব-বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা এবং সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রম শক্তি গড়ে তুলার কথাও বলা হয়।গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ আরও জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হবে। দেশের স্বার্থে নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষার আইন সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গুণগত ও মানসম্মত সার্বজনীন শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়। এছাড়া সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিদেশে চিকিৎসার প্রবণতা রোধ করতে হবে বলেও দাবিতে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনই গণতন্ত্র বিকাশের একমাত্র হাতিয়ার" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয়বাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী জাত দেশ গঠনে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে কাজ করে যাবে "গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ"।শেখ ছালাউদ্দিন ছালু'র সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)'র সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাই মন্ডল, মহাসচিব মোঃ ইদ্রিস চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)'র সভাপতি এ কে এম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ (বাবলু), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই সরকার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)'র শেখ আবুল কালাম, মোঃ আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর সভাপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ, ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ (ডিপিবি)'র চেয়ারম্যান এ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন খান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট এর সভাপতি মুফতি হাবিবুর রহমান হাওলাদার, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন এর সভাপতি খাজা মহিবউল্যাহ শান্তিপুরী, বাংলাদেশ নাগরিক কল্যাণ পার্টি'র চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুন্নবী ডাবলু, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-বিজিএ এর চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টি (বিসিপি)'র চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান দেশ, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ এর চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন পার্টি'র চেয়ারম্যান কাজী জহিরুল ইসলাম মনি, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ পার্টি'র সভাপতি মো. আসাদুল হক হাজরা হিমন, গণমুক্তি পার্টি'র সভাপতি মোঃ নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ ন্যায়বিচার পার্টি'র চেয়ারম্যান মোঃ হোসেন খান লিটন, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি'র সভাপতি এম এম কামরুল হাসান, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট পার্টি'র সভাপতি মোঃ মনির হুসাইন, বাংলাদেশ আইডিয়াল পার্টি'র সভাপতি মো. সোলাইমান মিলন প্রমুখ।
অনুষ্টান সঞ্চালনায় এবং পি. দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য ফাজী ছাঝির।