অনেকে বলছেন, সময় কম, আন্দোলন যা করার দ্রুত করতে হবে। সরকারকে বেশি সময় দেওয়া যাবে না। তাদের আগের মতো নির্বাচনের আয়োজন করতে দেওয়া হবে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। তাদের এখনই ভোটের মাঠ গোছাতে হবে। এমন বক্তব্য তৃণমূলের বেশি। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সমানতালে নেবে বিএনপি।
২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি ও আন্দোলন ইস্যুতে অগ্নিপরীক্ষায় আছে বিএনপি। দাবি আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথা বলছে দলটি। পরিস্থিতি বুঝে কৌশল ও কর্মসূচিতেও আসবে পরিবর্তন। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাষ্য- আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তারা। সে লক্ষ্যে সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে মাঠে আছে বিএনপি। তাদের অন্যতম দাবি সংসদ বিলুপ্তি। এ দাবিতে ইতিমধ্যে সংসদ থেকে তাদের দলীয় সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ পেলে বিএনপি যেকোনো সময় ভোট করতে পারবে। সে প্রস্তুতি বা সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি, সেই সঙ্গে ৩০০ আসনও গোছাচ্ছি। আমাদের মূল লক্ষ্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সময় তো বেশি নেই। চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে হবে। এসব পুওর (দুর্বল) কথায় কাজ হবে না। আর নির্বাচনের মাঠও গোছাতে হবে। নির্বাচন অনেক বড় কর্মযজ্ঞ। অপ্রস্তুত কিংবা আধা প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে গেলে ভালো ফল আশা করা যাবে না।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি নির্বাচন করবে না এটা তো বলেনি। আমরা তৃণমূল নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। আর আন্দোলন সফল না করে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আগের মতোই ফল হবে। তাই তার মতে, আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে আরও কৌশলী হবে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা সরকারকে হটিয়েই নির্বাচনে যেতে চাই। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আর বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যাবেও না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার ফাঁদ বানাচ্ছে। আমরা এতে পা দেব না। সূত্র বলছে, বিএনপি এবার আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে গিয়েই নির্বাচনে যেতে চায়। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে ভোট বর্জনের বিপক্ষে বিএনপি। তারা আরও কিছু সময় সরকারের মনোভাব দেখতে চায়। সরকারি দল যেখানে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের মাঠ গোছাচ্ছে; সেখানে বিএনপি অনেকটা পিছিয়ে। তারা এমন সময়ে রয়েছে যেখান থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আন্দোলন দুটিই করতে হবে। কেননা একদিকে চলমান আন্দোলনে ব্যর্থ হলে নেতাকর্মীদের কঠিন মাশুল দিতে হবে। আবার নির্বাচনের মাঠ সঠিকভাবে গোছাতে না পারলে প্রতিপক্ষের তুলনায় ভোটের দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হবে। তবে এখনই ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনমুখী না হলেও বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ কৌশলে চালাবে।
নজর বহির্বিশ্বের দিকে : বেশ কিছু দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে একটি ‘নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন দেখতে চায়। বিএনপি এসব সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। তারা এ জন্য এবার কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে। নিজেদের দাবির পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।