ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনে মধুলোভী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোট

নির্বাচনে মধুলোভী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোট

নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় কদর বাড়ছে ছোট দলগুলোর। চাঙ্গা হচ্ছে জোটের রাজনীতি। রাজপথের শক্তি বাড়াতে বড় দলগুলো নানাভাবে ক্ষুদ্র দলগুলোকে কাছে টানছে। এসব দলের অনেকের কেন্দ্রীয় কমিটিই নেই, শখানেক লোক পাওয়াও ভার। তবুও জোটের কলেবর বাড়াতে ও নির্বাচনি মাঠে জানান দিতে তাদের গুরুত্ব বাড়ছে। এই সুযোগে ক্ষুদ্র দলগুলো সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিতে ভিড়ছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির সিনিয়র নেতারাও যথারীতি ছোটদের সঙ্গে দফায় দফায় আলাপ-আলোচনা করছেন।

মূলত জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই জোট গঠনের তৎপরতা চারদিকে। নির্বাচনে নিজেদের কিছুটা সুবিধা আদায়ে বড় দলের তরীতে ভিড়ছে ছোটদলগুলো। বড় দলগুলো মনে করছে, জোটের রাজনীতিতে ব্যর্থতা নেই; বরং সুবিধাই বেশি। নানা মতাদর্শের লোকজন অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আসা মানে রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া।

রাজনীতিতে এখন শুধু জোট ভাঙ্গা-গড়ার খেলা চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠন জোটের রাজনীতিতে নাম লেখাচ্ছে। এই হিসাবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হতে জামায়াতসহ গাঁটছড়া বেঁধেছে ৬০টির বেশি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

অন্যদিকে জোট গঠনে কিছুটা পিছিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তারা এখনও আছে পুরোনো মিত্র ১৪ দলকে নিয়েই। তবে নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোটেও আরও ক্ষুদ্র দলের শরিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান নেতারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন সমমনা কয়েকটি দলের সঙ্গে আলাপ চলছে। গেল একাদশ নির্বাচনের সময় মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। সেখানে বেশ কয়েকটি ডান, বাম ও ইসলামি দলের অংশগ্রহণ ছিল।

বড় দুই দল ছাড়াও বাম ও ইসলামি দলগুলো পৃথক জোট গঠনের চেষ্টা করছে। ১৭ ও ১২ দল মিলিয়ে আরও দুটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক জোটও গঠন হয়েছে। দিনশেষে কয়েকটি বাম বাদে সব জোট বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পালে ভিড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জোট নিয়ে একাধিক বক্তব্য দিলেও তাদের চূড়ান্ত ভূমিকা জানতে আর সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা নিজেদের গৃহদাহ এখনও পুরোপুরি কমেনি। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের চান এক, আর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ চান আরেক। তাকে রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনদের ঘেঁষা হিসেবে ধরা হয়।

জোট নিয়ে জিএম কাদেরের ভাষ্য- রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পার্টির সুবিধা দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু চান তিনশ আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করতে।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের পাশাপাশি মহাজোট গঠন করা হয়। বিএনপি চারদলীয় জোটের বলয়ে থেকে ২০১২ সালে ২০ দলীয় জোট গঠন করে। ২০১৭ সালের ৭ মে দুটি দল ও দুটি রাজনৈতিক জোটের সমন্বয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) নামের একটি ‘বৃহত্তর জোট’ গঠন করে জাতীয় পার্টি। এই জোটে দুটি নিবন্ধিত দলসহ মোট ৫৮টি দল থাকলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করে দলটি।

বিএনপি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। নির্বাচনে ভরাডুবির পর ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করেনি বিএনপি। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের গতি ও ব্যাপ্তি বাড়াতে ২০ দলীয় জোট অনানুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন এক অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে বলে দেওয়া হয়, এখন থেকে কেউ যেন ২০ দলীয় জোটের নাম ব্যবহার না করে। এর উদ্দেশ্য, দলগুলো যাতে যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়।

সর্বশেষ গত রোববার সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নিতে ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’ নামে আরেকটি নির্বাচনী জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই জোটে থাকা একটি রাজনৈতিক দলেরও ইসির নিবন্ধন নেই। এর আগে ‘১২ দলীয় জোট’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই জোটের নেতৃত্বে আছেন সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার। এর বাইরে ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে ১২ দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে। সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। পাঁচটি দল ও দুটি সংগঠন মিলে হয় এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। চার রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে রয়েছে।

বিএনপির ৬টি আসন শূন্য হওয়ার পর মিত্রদের খুশি রাখতে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। ইতিমধ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ডেকে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ১০ ইসলামি দল মিলিয়ে একটি স্বতন্ত্র জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। নেতৃত্বে থাকা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন নয়, স্বাতন্ত্র একটি জোট গঠন করতে চাই। সমমনা ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

২০ দলীয় জোটের সাবেক নেতা শওকত হোসেন নীলুর ভাই সালুর নেতৃত্বে ১৭ দলের আরেকটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক জোট এখনও কোনো দলকে সমর্থন দেয়নি। অন্যদিকে ভোটব্যাংক বিবেচনায় যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি ইসলামি দলের অংশগ্রহণ বাড়াতে মরিয়া। আসন কিংবা জাতীয় সরকারের কথা বলে বিএনপি দলগুলোকে কাছে টানছে। আর ইসলামি দলগুলো প্রলোভনে পড়ে সরকারের জোটে না যায়- সেদিকে নজর রাখছে বিএনপি।

নির্বাচন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত