‘সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল-সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
গতকাল নয়াপল্টনের সড়কে সাড়ে তিন ঘণ্টার গণ-অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকার বাইরে নয়টি সাংগঠনিক বিভাগে বিএনপি গণ-অবস্থানের কর্মসূচি পালন করে। বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্বপ্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম, বিজয়নগরের পানির ট্যাঙ্কের কাছ থেকে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, নাইটিঙ্গেল মোড়ে সমমনা গণতান্ত্রিক জোট এবং কারওয়ান বাজারে বিএফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি গণ-অবস্থান থেকে আলাদাভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুই দিনের মাথায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে সারা দেশে সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌর সদরে সমাবেশ ও মিছিল হবে।
কর্মীরা এ সময় করতালি দিয়ে দলের নতুন এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আজ বলছে তারা আর পারছে না। চাল কিনতে পারে না। খাদ্য কিনতে পারে না। কিন্তু ওয়াসার এমডি আমেরিকায় ১৪টি বাড়ি কিনেছেন। তিনি কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন? আজকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে।
সরকারের পদত্যাগ, একাদশ সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে, এটি ছিল তার দ্বিতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথম কর্মসূচিতে গণমিছিল করেছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
বুধবার গণ-অবস্থানে যোগ দিতে বিএনপিকর্মীরা সকাল থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে একপাশে পলিথিন ও মাদুর বিছিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কের একপাশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশের রূপ পায়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনের সড়কের একটি অংশে বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে সেখানে চেয়ার বসানো হয়। তাদের এ অবস্থানে নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ১১টার দিকে অবস্থান কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয় কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জাসাস শিল্পীরা। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে নয়াপল্টনের পুরো এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। কাকরাইল ও ফকিরাপুল মোড়ে জলকামানের গাড়ি দেখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে কোনো ধরনের গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারকে টোকা দিয়ে ফেলতে চাই না। সঠিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। সরকার অযথা আতঙ্কে ভুগছে। বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জেলখানায় আর জায়গা নেই। রাজনৈতিক কর্মীদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। দুজনের সেলে সাত-আটজন করে রাখা হচ্ছে। বিএনপির নেতাদের জেলে ভরে, মামলা দিয়ে, গুম-খুন করে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে আছে এই সরকার।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।