বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৩০ ডিসেম্বর রাজপথে নামলেও গণঅবস্থানে ছিল না জামায়াতে ইসলামি। এমনকি ১৬ জানুয়ারি যুগপৎভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়েও এখনও কোন ঘোষণা দেয়নি সংগঠনটি। তাদের এই অবস্থানের পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জামায়াত কি যুগপৎ আন্দোলন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? নাকি এটা তাদের নয়া কৌশল। এনিয়ে জামায়াত বলছে, বিএনপির প্রতি তাদের ক্ষোভ ও অভিমানের কথা। জামায়াতের এমন মৌন অবস্থানে যুগপৎ শরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে ধরা হয় জামায়াতকে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বুধবার রাজধানীতে ১০ দফার পক্ষে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও, জামায়াতে ইসলামী তা করেনি। বরং ওয়ান-ইলেভেন উপলক্ষে দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরীতে আলোচনা সভা করে। তবে ৩০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াত গণমিছিলে মাঠে নামলে মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে দলটির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত ও গ্রেপ্তার হন। এলডিপি, ১২ দলীয় জোটসহ কয়েকটি দল জামায়াতের মিছিলের বাধার নিন্দা করলেও, বিএনপি মৌনতা অবলম্বন করে। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তি দাবি করে বক্তব্য দেয়নি বিএনপি। যদিও জামায়াত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারে নিন্দা ও মুক্তি দাবি করে।
বিএনপির এমন নীরবতায় অনেকটা ক্ষোভ জমেছে জামায়াত নেতাকর্মীদের মনে। সংগঠনের ঢাকা উত্তরের এক নেতা গনমাধ্যমকে বলেন, ৩০ ডিসেম্বর আমরা যারা সারাদেশে মাঠে নেমে মার খেলাম; চোখ হারালাম গ্রেফতার হলাম- তাদের প্রতি নূন্যতম সহানুভূতি দেখায়নি বিএনপি। একটি সাধারণ বিবৃতি দিতেও কার্পণ্য করেছে তারা। আমাদের আমিরকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করেছে; কই বিএনপি তো একট টু শব্দও করেনি। এগুলো নিয়ে আমাদের মনে ক্ষত তৈরি হয়েছে। এখন দেখি সিনিয়র নেতারা কি সিদ্ধান্ত নেন।
প্রায় একই কথা বলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম।তিনি জানান, কয়েকটি কারণে বিএনপির প্রতি অভিমান সৃষ্টি হয়েছে জামায়াতের। এক. একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করে আমাদের কয়েকশত নেতাকর্মী আহত ও গ্রেফতার হলেও বিএনপি নূন্যতম সহানূভূতি দেখাতে পারেনি। এ ব্যাপারে বিএনপি একটা বিবৃতিও দেয়নি। দুই. ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করে। জামায়াত আমির এর আধা ঘণ্টা পর ১০ দফা ঘোষণা করে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি দেন। শুধু কর্মসূচি পালন করার কারণে আমাদের আমির গ্রেপ্তার হয়ে এক মাস ধরে জেলে। কিন্তু বিএনপি নূনতম নিন্দাও জানাতে পারেনি। তিন. আমাদের সঙ্গে বিএনপির নেতারা গত এক মাস ধরে কোন ফরমাল কিংবা ইনফরমাল আলোচনা করেনি। অথচ ছোট ছোট দলের অফিসে গিয়েও বিএনপি নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছে। আমাদের নিয়ে এমন লুকোচুরি কৌশল নেতাকর্মীরা মানতে পারনি। এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনায় ছিল; তিনি কারাগারে যাওয়ার পর লিয়াজোঁ কমিটির কোন বৈঠক করেনি যুগপৎ আন্দোলনের সমন্বয়ক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আন্দোলনে আমাদের জনশক্তি ক্ষয়ক্ষতি হয়; এর জন্য অত্যন্ত বিবৃতি দিয়ে বিএনপি পাশে দাঁড়াবে না? আমরা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালি দল। শুধু এখন নিবন্ধন নেই।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বলেন, ১৯৯৪ সালে যুগপৎ আন্দোলনে আওয়ামী লীগও বিবৃতি দিয়ে জামায়াতের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তারা সফলও হয়েছে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ১৬ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমমনা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। তবে জামায়াত তা করবে কি না; জানতে চাইলে আবদুল হালিম বলেন, দলীয় ফোরামে আগে আলোচনা করা হবে। এখন বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে জামায়াতের এমন অবস্থানকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল ও জোট মিলিয়েও জামায়াতের মতো শক্তি হবে না- এটা তো বাস্তব সত্য। বিএনপি এমন শক্তিকে কাজে লাগাতে পারছে না। এতো বড় মিত্র শক্তির নাম দিতে লজ্জা পায় বিএনপি। অথচ আমরা জামায়াতের আমিরের মুক্তি দাবি করেছি।