‘বিএনপির নেতিবাচক ধ্বংসাত্মক, মানুষ পোড়ানোর অপরাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা-বয়কট করার অপরাজনীতির কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের ‘আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই নতুন মার্কিন ভিসা নীতি’ বক্তব্যের জবাবে এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বিএনপির অন্তর্জ্বালা শুরু হয়েছে কারণ তাদের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নাকচ করেছে এবং অন্য কোনো দেশের সমর্থনও পায়নি। ফলে তাদের পক্ষে আগের মতো ‘নির্বাচন প্রতিহত করবো, বর্জন করবো’ এগুলো বলার সুযোগ নাই।’ যে কারণে এখন ফখরুল সাহেব একটু হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন, বিভিন্ন কথা বলে আত্মতুষ্টি লাভের চেষ্টা করছেন।’
হাছান বলেন, ‘সব কথার শেষ কথা হচ্ছে তাদেরকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন প্রতিহত করার রাজনীতি তাদের পক্ষে আর করা সম্ভবপর নয়। তাই তাদেরকে অনুরোধ জানাবো, দেশে গন্ডগোল করার পরিকল্পনা না করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।’
বিএনপি-জামাত তো সবসময় এক : ড. হাছান
বিএনপি এবং জামায়াত আবার এক হচ্ছে, জামায়াত ১০ জুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে -সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামাত তো সবসময় এক আছে। তারা কোনো সময় বিচ্ছিন্ন হয় নাই, মাঝে মধ্যে মৌনতা অবলম্বন করে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা দেশে গন্ডগোল করার চেষ্টা করবে। সেই গন্ডগোল করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে। এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, গন্ডগোল করার উদ্দেশ্যেই। সেই গন্ডগোল তাদেরকে করতে দেওয়া হবে না। আমরা সতর্ক আছি, বিএনপি-জামাতকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় দেশের জনগণ জানে।’
একই সাথে ড. হাছান বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি ঘোষণা করবে, এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে জামাত এবং বিএনপির সহিংসতা করার লক্ষ্যেই কর্মসূচি সাজাচ্ছে বলে আমরা মনে করি। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটি গন্ডগোল করে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা, পানি ঘোলা করা, পানি ঘোলা করে সেখান থেকে মাছ শিকার করা। সেটি করার সুযোগ তারা পাবে না।’
গুজব প্রতিরোধ করবে সরকার ও মূলধারার গণমাধ্যম : তথ্যমন্ত্রী
নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজবের উদ্ভব হচ্ছে -এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বিশ্বব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ। আমি ক’দিন আগে এশিয়া মিডিয়া সামিটে গিয়েছিলাম সেখানে এই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং সামিটের ঘোষণাপত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। বিএনপি-জামাতের পেইড এজেন্ট যারা খুনের দায়ে, দুর্নীতির দায়ে পলাতক তারা বিদেশে বসে আর কিছু ব্যক্তিবিশেষ দেশ থেকে নানা গুজব ছড়ায়।’
গুজব প্রতিরোধের জন্য সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী জুলাই থেকে বিটিআরসির সক্ষমতা বাড়বে এবং আমাদের মন্ত্রণালয়েও গুজব প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর মূলধারার গণমাধ্যম পত্রিকা এবং টেলিভিশন করোনার মধ্যেও গুজবের বিরুদ্ধে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আমি আশা করবো, ভবিষ্যতেও নির্বাচনকে সামনে রেখে হোক, যে কোনো প্রেক্ষাপটেই হোক, গুজবের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম সবসময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’
‘বিএনপির বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘেরাও : প্রস্তুত জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’
৮ জুন বিএনপির বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, এবার যদি সেটা করে তাহলে জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করবে, উচিৎ শিক্ষা দিবে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত আছে। আর তারা তো বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। তারেক রহমানের খাম্বা ইন্টারনেশনাল কোম্পানী করে বিদ্যুতের খাম্বা বানিয়েছিলো বিদ্যুৎ না দিয়ে শুধু খাম্বা লাগিয়েছিলো। আমি আশা করবো তারা যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘেরাও করতে যাবে তারেক রহমান যে শুধু খাম্বা দিয়েছিলো সেটিও মাথায় রাখবে।’
বিদ্যুৎ সরবরাহে ছেদ নিয়ে প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিলো। এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। এখন মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে এটি ঠিক কিন্তু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ১৫ দিনের মধ্যে এটা পরিবর্তন হবে।’ বিদ্যুতের এই অসুবিধা বিশ্বব্যাপী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জার্মানীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক সেকেন্ডের জন্যও কখনো বিদ্যুৎ যায়নি। সেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিদ্যুতের রেশনিং করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে এসএমএস করে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য।