ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।
আর জাতীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনিভূত হচ্ছে। যা দেশের জনগণের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে এবং দেশে আরও একবার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার সকালে ঢাকার গুলিস্থানে ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সরকার গঠনে দলের পক্ষ থেকে ৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন চরমোনাই পীর বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি করেছেন তিনি। চরমোনাই পীর বলেন, আগামী জাতীয়সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতা করে চরমোনাই পীর বলেন, রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধীদল বলেছিল নির্বাচনে সূ² কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধী দল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিগত পদ্ধতিগুলোর ত্রুটির কারণে নিবন্ধিত সব দলের পরামর্শক্রমে ও অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে ইসলামী আন্দোলন মনে করে।
জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনও কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।
সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মসজিদ মিশনের মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, জাতীয় ইনসাফ কায়েম পার্টির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমির মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, ফরায়েযী জামাতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, এনডিএম সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভ‚ঁইয়া প্রমুখ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ইসলামী আন্দোলনের ৯ দফা প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন করে বলেন, এই রূপরেখা বিএনপি রূপরেখার সাথে অনেকাংশেই মিল আছে। তবে তিনি (পি.আর) পদ্ধতির সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেন। তিনি ইসলামপন্থিদের অনৈক্যের সমালোচনা করে বলেন, সরকার হটানোর আন্দোলনে যাদের অবদান থাকবে, বিএনপি তাদের সাথে নিয়ে সরকার গঠন করবে।