অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলা-গ্রেফতার-সহিংসতার প্রতিবাদে আজ সারাদেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় শহরে জনসমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকায় জনসমাবেশটি সোমবার বেলা ৩টায় নয়া পল্টনের পরিবর্তে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবস্থান কর্মসূচি পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলা, গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে জনসমাবেশ হবে। ঢাকার জনসমাবেশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নয়াপল্টনে জনসমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, পরবর্তীতে আলোচনার প্রেক্ষিতে সেটি নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই জনসমাবেশে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রাজধানীবাসী অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান রিজভী।
রোববার (৩০ জুলাই) রাতে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ পুলিশের অনুমতি নিয়ে হয়নি। নব্বইতে পুলিশের অনুমতি নিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন হয়নি। রাজনৈতিক সমাবেশের পুলিশের অনুমতি সংবিধান পরিপন্থী। রাজনৈতিক দলের কাজ হচ্ছে পুলিশকে অবহিত করা, আর পুলিশের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া।
রিজভী বলেন, সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে রামদা হকিষ্টিক নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হলো। যা সকল গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রকাশ পেয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো যাদের ওপর হামলা করা হলো তাদেরকেই আসামী করে মামলা করলো পুলিশ।
তিনি বলেন, ভোটবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বিএনপি’র এক দফার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও শতকরা ৮০ ভাগের বেশি জনগণ। আজ শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবীতে ‘স্টেপ ডাউন শেখ হাসিনা’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়েছে। ‘স্টেপ ডাউন শেখ হাসিনা’ লিখে পোষ্ট দিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদসহ শ্রেণী—পেশার মানুষ এবং বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বদরবারে বারবার প্রমাণিত হয়েছে নিশিরাতের সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
রিজভী বলেন, আজকে তথাকথিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন—আগামী অক্টোবরে তফশীল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। তবে এই স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়িত হবে না, শেখ হাসিনা আরেকটি ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন করার অপচেষ্টা করছে, জনগণ তা হতে দিবে না।
বিএনপির এই নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে জবাবে বলেন, সরকার নাকি মানবতা দেখিয়েছে! এক বছরে রাজপথে ১৭ জনকে হত্যা করেছেন, তখন কোথায় ছিলো মানবতা? অসংখ্য নেতাকর্মীকে পঙ্গু বানিয়ে দেয়া হয়েছে, কোথায় ছিলো মানবতা? গতকাল শনিবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে পুরো রাজধানীকে রক্তে রঞ্জিত করেছেন, কোন মানবতা থেকে? সংবাদ সম্মেলনে গতকাল রাজধানীতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় আহত ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের তালিকা প্রকাশ করে আটককৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
তিনি জানান, গতকাল ও আজকে ৫৪৯কে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক করা ২৫০ নেতাকর্মীকে, আহত হয়েছেন ৬৫০ জনের অধিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।