আদালতকে সরকার প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১৬:১৮ | অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালত গতকাল বুধবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে আদালতকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন ।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন এসব কথা বলেন ।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা ছিল। সেই মামলাগুলো দুর্নীতির একই ধরনের মামলা ছিল। সেটাও ওয়ান-ইলেভেনে দেওয়া হয়েছিল। সেই মামলাগুলো কিন্তু তারা অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে বিভিন্ন বিচারক নিয়োগ দিয়ে আদালতেই খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আসলে তারা আদালতকে ব্যবহার করছে অস্ত্র হিসেবে, তারা ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এসব সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর আগে আমাদের এমপি ছিলেন সাতক্ষীরার হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তাকে ৭০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এর আগে ঈশ্বরদীতে আমাদের নেতা মিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তাদের অপরাধ ২৫-২৬ বছর আগে পাবনায় একটা সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনাগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে এমনভাবে তারা প্রচার করছে যেন এগুলো সত্য, বাকিগুলো মিথ্যা। 

গণমাধ্যমকেও তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বর্তমান রাজনীতির অবস্থা তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষেই ফ্যাসিবাদী চক্রান্ত। তারা প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বিচার বিভাগকে। এই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তারা জনগণের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, সেই অধিকারগুলোকে পুরোপুরি হরণ করে নেওয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য মানুষের যে সংগ্রাম- সেই সংগ্রাম স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগকে দিয়ে আজকে চরমভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষকে। 

তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্ট তা ১০ বছর করল। অথচ একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসহ বহু নেতা জামিন পেয়েছেন, পরবর্তীকালে মামলা খালাস হয়ে গেছে এবং তিনি মন্ত্রী পদেও ছিলেন। 


বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন- বর্তমান বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, জনগণ যে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লাখ লাখ মানুষ গত কয়েক বছর ধরে এই সংগ্রামে নেমেছে, লাখ লাখ মানুষ রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য একটাই-গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেই জন্য তারা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন চেয়েছে। ঠিক সেই সময়ে চলমান আন্দোলনের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যিনি এই আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সারা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সঠিক খাতে নিয়ে যাচ্ছেন। 

আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব, তার স্ত্রী অরাজনৈতিক মানুষ ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। একটি মাত্র লক্ষ্য-আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়া, তাকে ধীরগতি করা। যেখানে মামলাই হয় না, সেখানে সাজানো মামলা দিয়ে তাদের এই সাজা দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রথম থেকেই এই সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে। এই যে কেয়ারটেকার সরকার ইস্যুটি নিয়ে গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে- তাও কিন্তু আদালতকে নিয়ে। বিচারপতি খায়রুল হকের ক্রিমিনাল অফেন্সে অনৈতিকভাবে রায়। 

তিনি তার রায়ে সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জাতিকে চিরস্থায়ীভাবে সংঘাতের দিকে নিমজ্জিত করেছেন এবং অনিশ্চয়তার দিকে ঢেলে দিয়েছেন। এই সরকার আদালত, গণমাধ্যম, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি ব্যবহার করেছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে বেআইনিভাবে অন্যায়ভাবে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই যে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই জনগণ কিন্তু তার প্রতিবাদ করেছে। 

বুধবার রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দেশে প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে তার প্রতিবাদ করেছে। এই রায়ের প্রতিবাদে আমরা (বিএনপি) ৪ আগস্ট সারা দেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বাদ জুমা প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা করছি। 

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলার যৌথ উদ্যোগে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে দুপুর ২টায়।