ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ-ইইউ অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায়

‘খুনিদের সঙ্গে’ সংলাপ নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির কপালে জনগণের ধিক্কার জুটবে
‘খুনিদের সঙ্গে’ সংলাপ নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী

বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও খুনিদের দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা পুলিশ খুন করেছে, বাসে আগুন দিয়েছে তাদের সঙ্গে কীসের আলাপ, কীসের বৈঠক? বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি জনগণও চায় না। বিএনপি-জামায়াতকে মানুষ ঘৃণা করে। তাদের দুর্নীতির জন্য কানাডা থেকে লোক এসে সাক্ষ্য দিচ্ছে।

গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তিন দিনের সরকারি সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের দেশ, রক্ত দিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এখানে তো খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ করার প্রশ্নই আসে না। কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমিও করব। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। বিএনপি ২৮ তারিখে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করল। তারা পুলিশ হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। তারা প্রকাশ্যে এ সব করেছে। পুলিশ সাংবাদিক ও আইন বিভাগ ছিল তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আত্মগোপনে গেল। এরপর আবার অবরোধ দিল। কীসের অবরোধ, কার জন্য এই অবরোধ? শুধু ঢাকা নয়, লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নষ্ট করা- এগুলো তো বিএনপির কাজ। এই ঘটনায় বিএনপির প্রতি জনগণের ধিক্কার ছাড়া কিছুই জুটবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতার মাধ্যমে বিএনপি আবারও নিজেদের সন্ত্রাসী দল প্রমাণ করল। কানাডার কোর্ট-ও কিন্তু এই বিষয়টা কয়েকবার বলেছে। এখানে যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সেখানে আশ্রয় চাইতে গিয়েছিল, তারা কিন্তু পায়নি, সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মাঝখানে তারা কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল এবং আপনারা বিশেষভাবে লক্ষ্য করছিলেন আমাদের সরকার তাদের তেমন কোনো বাধা দেয়নি, কিছুই দেয়নি। তাদের ওপর সবসময় একটাই শর্ত ছিল যে, তারা কোনো রকম অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করবে না। বিএনপির কর্মকাণ্ডকে ইসরাইলি বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করে সরকরপ্রধান বলেন, পুলিশকে তো মেরেছেই তারপর হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ। আজকে ইসরাইল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, সেখানেও হাসপাতালে বোমা হামলা করল। নারী-শিশুদের হত্যা করেছে এবং সেখানে তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখেছে। আমি এখানে তফাত কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে, তখন তাদের কাজটাই হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, বাংলাদেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা- দেখাবে যে কিছু হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সময়মতো হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে বাঁকাল আমরা কোনো পরোয়া করি না। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় করেছি। এরপর বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয়, এটি আপনারাও বিশ্বাস করেন। ১৪ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে। শুধু মেট্রোরেল, টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস নয়, আপনারা সারা বাংলাদেশে ঘুরে দেখে আসুন। গ্রামগঞ্জে ঘুরে আসুন। আমরা প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনা মাফিক করেছি। তৃণমূলের যে পরিবর্তন হয়েছে তা আপনারা নিজেরা দেখে আসুন। বিএনপি-জামায়াতের হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা কি মানুষের জাত নাকি? আমি জানতাম তারা এরকম কিছু করতে পারে। তাই আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তাদের কর্মকাণ্ড সব ভিডিও করা আছে। রেকর্ড আছে। এবারও নির্বাচন থামাতে পারবে না। ১৩ তে পারেনি, ১৮ তেও পারেনি। এবারও পারবে না। সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গেছি, সবাই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট। কাজেই বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, সেই শিক্ষাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেব। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের ওপর তারা যেভাবে চড়াও হলো বুঝতে পারলাম না। সাংবাদিকরা তো বিএনপির পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দেয়। টক শো’সহ সবকিছুতেই সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে বিএনপি-জামায়াতের এত রাগ কেন সাংবাদিকদের ওপর। সবজায়গায় তাদের নিউজ সবার আগে। আমার নিউজ সবার পরে। কোথাও কোথাও ৪/৫ নম্বরেও থাকে।

যাদের বাস পুড়েছে তাদেরটা সরকার দেখবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব গাড়ি পুড়িয়েছে। ২০১৩ সালে তারা একই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে। পরে ২০১৪ ও ১৫ সালে একই রকম অবস্থা। ৩টি বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর আক্রমণ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে তারা ব্যবসাটা চালাতে পারেন। আহত নিহতদের আমরা সহায়তা দিয়েছি।

২৮ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল উপমহাদেশে আর কোনো দেশ করেনি। আমরা প্রথম এই টানেলটা করলাম। চট্টগ্রাম একটা বাণিজ্যের জায়গা, পোর্ট রয়েছে। সেখানে টানেল তৈরি করে যখন আমরা উদ্বোধন করছি, তখন এখানে তারা মানুষের ওপর হামলা করছে, পুলিশের ওপর হামলা করছে, মানুষ খুন করছে, পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

গুলি কারা কারা করেছে, তাদের নামধাম বের করা হবে তারা তা প্রকাশ্যেই করেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। কালকেও লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এর আগে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্রাসেলস সফরে বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সংযোগ, শিক্ষা ও গবেষণা, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনে বিনিয়োগের সুযোগের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। আমার সফরের মাধ্যমে আমি আশাবাদী যে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর হবে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের আমন্ত্রণে গত ২৪ অক্টোবর ব্রাসেলসে যান শেখ হাসিনা। সফরকালে সাইডলাইনে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। সফর শেষে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ২৫ অক্টোবর সকালে তিনি ইসির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোর একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি অনুদান চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও ইসির মধ্যে একটি ১২ মিলিয়ন ইউরোর অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া এই সফরে বাংলাদেশ সরকার এবং ইসি বাংলাদেশের সামাজিক খাতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোর পাঁচটি ভিন্ন অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শেখ হাসিনা একই দিন ২৫ অক্টোবর গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন এবং বক্তৃতা করেন। বিকালে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ার্নার হোয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউরোপীয় কমিশনের কমিশনার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট জেনেজ লেনারসিক ও কমিশনার ফর ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশিপ জুটা উরপিলাইনেনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে উরসুলা ভন ডার লেয়েনের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন। ২৬ অক্টোবর সকালে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রুর সঙ্গে ও লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেলের সঙ্গে দুটি পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। একই দিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের সমাপনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন। শেখ হাসিনা পরে বেলজিয়ামে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত