ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু

আজ ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু

গত সপ্তাহে টানা তিনি দিনের অবরোধের পর আজ রোববার ভোর থেকে আবারও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী কয়েকটি দলের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি শেষে এক দিন বিরতি দিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল কিংবা অবরোধের ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানা গেছে।

এদিকে অবরোধের আগের রাতেই রাজধানীতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরেও কয়েকটি স্থানে গাড়িতে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। আগের বারের তিন দিনের অবরোধ চলাকালে সারাদেশে অন্তত ৮৫টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। মারা যান তিনজন।

অন্যদিকে সরকার বিরোধীদের অবরোধে সড়ক, রেল ও নৌপথ স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। জনসাধারণকে নিরাপত্তা দিতে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি। মালিক পক্ষ এবারও অবরোধে গাড়ি চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারও অবরোধ ঠেকাতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরপর দুই দিন প্রকাশ্য জনসভায় আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যারা আগুন দিতে আসে তাদের ধরে আগুনে ফেলে দেওয়া এবং যে হাত দিয়ে আগুন দেয় সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগুন সন্ত্রাসীদের কীভাবে রুখতে হয় তা তার জানা আছে বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সপ্তাহের শুরুতে টানা দুই দিনের এই কর্মসূচি ঘোষণা করলেও বিএনপি এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এক দিন বিরতি দিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল কিংবা অবরোধের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাও বিএনপি দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। অবরোধের মধ্যেই আজ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে হরতাল ডেকেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, চট্টগ্রামের নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই হরতাল ডেকেছে চট্টগ্রাম বিএনপি। রাজনৈতিক কোনো সুরাহা না হলে এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা ভাবছে বিএনপি।

গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সিটি সেন্টারের সামনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা আগের বারের হরতাল-অবরোধে ব্যাপক নাশকতার কথা মাথায় রেখে এবারের অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে মাঠে রয়েছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। এছাড়া গণপরিবহনগুলোকে সচল রাখতে, জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এবং অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধেও থাকবে গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি জানায়, যারা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে কাজ চলমান। হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে কোন কোন এলাকায় আগুন দেওয়া হয়, কারা এসব অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং যাত্রীবেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাসে আগুনের ঘটনা কমিয়ে আনতে পরিবহনগুলোতে গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতি ও নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

অবরোধে এবারও মাঠে তৎপর থাকবে এলিট ফোর্স র‌্যাব। বাহিনীটি জানিয়েছে, অবরোধে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচলে বিশেষ নিরাপত্তা (এসকর্ট সার্ভিস) দেবে র‌্যাব। রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলকারী ও ঢাকামুখী বাসগুলোকে দেওয়া হবে এই নিরাপত্তা। এজন্য কয়েকটি পরিবহনের কিছু বাস একই সময়ে ছাড়তে হবে। পুরো পথে যাত্রীদের নিরাপত্তায় সতর্ক প্রহরা দেবেন র‌্যাব সদস্যরা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যান চলাচলে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে র‌্যাব। পরিবহন মালিক বা সংশ্লিষ্টরা চাইলে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। এক্ষেত্রে কাছাকাছি সময়ে চলাচলকারী ৮/১০টি বাস একসঙ্গে ছাড়তে হবে।

র‌্যাব সদস্যরা বাসগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত এসকর্ট দেবে। বেশিরভাগ বাস মূলত রাতেই চলাচল করে। সেভাবেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। সারাদেশে র‌্যাবের তিনশ’র বেশি টহল থাকবে। কিছু স্থানে র‌্যাব–পুলিশ যৌথ টহল দেবে। নাশকতা বা চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর সুযোগ কেউ পাবে না।

এদিকে অবরোধ চলাকালে রেল, সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে ‘অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত’ স্লোগানে সারাদেশে নিজেদের ৬৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। পুলিশ-র‌্যাবসহ নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি তারাও নাশকতা ঠেকাতে কাজ করবেন।

শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫ নভেম্বর সকাল থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দুই দিন রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা মোতায়েন থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাট ছাড়াও রেললাইনে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্কভাবে দৃষ্টি রাখবেন। রেললাইন রক্ষায় সারাদেশে ১৪৭৬টি পয়েন্টে ১০ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পাঁচ হাজার ২৯৬টি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৫৫ হাজার অঙ্গীভূত আনসার নিজেদের দায়িত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এবারের অবরোধ কর্মসূচিতেও মাঠে সরব থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজধানীসহ সারাদেশে সতর্ক থাকতে দলটির নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কারা নাশকতা করে তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

অবরোধে সারাদেশে সবধরনের পরিবহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানী খন্দকার জানান, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে। সব রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সমিতি বা কোম্পানিভুক্ত মালিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এই পরিবহন নেতা বলেন, অবরোধের দিনগুলোতে গাড়ি চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সরকারি পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা হিটলার বল বলেন, অবরোধেও বিআরটিসি বাস স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, অবরোধে ট্রেনের কোনো সময়সূচি পরিবর্তন হবে না। ট্রেন সময়মতো চলবে।

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমরা এবারও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করব। তবে এটা যাত্রীর ওপর নির্ভর করবে। তবে একদম বন্ধ থাকবে না।

অবরোধ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত