২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। এরইমধ্যে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ ও সমমনা বেশকিছু দল ভোটে অংশ নিচ্ছে। নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ভোটমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়। নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলগুলো।
উৎসবমুখর পরিবেশে এরইমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। ৩০০ আসনের বিপরীতে তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে দলটি। এতে আওয়ামী লীগের ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীর বাইরেও সিনেতারকা, খেলোয়ার, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, সাবেক আমলা, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নৌকার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সারথী হতে নৌকার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তারা। ভোটকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্যদের কারো কারো কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমান এমপিদের মধ্যে যাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, অর্থনৈতিক অনিয়ম, পরের জমি ও সরকারি সম্পত্তি দখল, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। আবার বয়সের কারণেও বাদ যেতে পারেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ও তরুণ মুখ। ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবার কর্মফলের হিসেব কষে জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। যিনি আদর্শ জনপ্রতিনিধি হয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিমার্ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সহজে জয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন। এমন প্রার্থী খুঁজে নিবে দলটি। তবে সেক্ষেত্রে আরো বিবেচনা করা হবে, তরুণ, সৎ, দলের প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ ও জনসাধারণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। অতীদের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতেই এবার মূল্যায়ন হবে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরাও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এমন প্রার্থীকে নৌকা দেওয়ার পক্ষে। তাদের মতে, যারা বিতর্কের ঊর্ধ্বে, দলের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন, তাদের কর্মফল বিশ্লেষণ করে নৌকার মাঝি নির্ধারণ করা হোক। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। তিনি যাকে নৌকা দিবেন, তার পক্ষে কাজ করবে বলে জানান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলের একাধিক বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। অপকর্মে জড়িত হয়ে দলের জন্য বিতর্ক কুড়িয়েছেন, এমন নেতারা আর কখনো দলের মনোনয়ন পাবেন না। এমনকি বিতর্কিত পরিবারের কোনো সদস্যকেও দলীয় প্রার্থী করা হবে না।
নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামীকাল বসছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা। সকাল ১১টায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলীয় প্রধান ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সভা থেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা দলটির সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে হতো। তবে এবার নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম করবেন না। তাই ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সভার প্রথম দিনে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে। মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনায় আনা হয়। দলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হয়, যাদের জনপ্রিয়তা ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দলের সঙ্গে কাজ করছেন, দলের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, যাদের সাহস রয়েছে, যারা দলের প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্ল্যাহ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। যোগ্য নেতৃত্বের কোনো অভাব নেই। সমাজে যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তারাই মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন।