আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাইকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘নির্বাচন যেন না হয় সেজন্য এখনো যড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি নিজেরা নির্বাচনে যাবে না, অন্যদেরও ভোট দিতে দেবে না। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। সবাই শান্তিপূর্ণ থাকবেন। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ২০০৯ থেকে ২০২৩ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আজকে আমরা ২০২৪-এ পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশে এত উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এটিই আওয়ামী লীগের শেষ নির্বাচনী জনসভা।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু বিএনপি নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে। মিলিটারি ডিকটেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা সেই একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে।’
ভোটের অধিকার রক্ষায় সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে ৪ তারিখ। ৭ তারিখে নির্বাচন। আমি দেশের সবাইকে অনুরোধ করবো, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটের অধিকার আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার মিলিটারি ডিকটেটররা কেড়ে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেছিল। এই আমরা আওয়ামী লীগ সেখান থেকে জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, প্রতি রাতে কার্ফিউ অবস্থা সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। এই ভোটের অধিকার আপনার মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার আমরা সংরক্ষিত করেছি।’
নারায়ণগঞ্জ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই ছয়দফা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের অনেক বড় ভূমিকা ছিল। আদমজী জুট মিলের শ্রমিকরা সেসময় পায়ে হেটে ঢাকায় গিয়েছিল। এই নারায়ণগঞ্জ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নারায়ণগঞ্জে নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছি। এর আগে আমাকে নৌকা দিয়ে নদী পার হতে হয়েছিল। এখন আর নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে যেতে হয়না। আমরা গাজী সেতু, কাঁচপুর সেতু, মেঘনা ও গোমতী সেতু করেছি। লিংক রোড ৬ লেনে উন্নীত হয়েছে। ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পঞ্চবটি মুক্তারপুর ফ্লাইওভার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ি কাঁচপুর ৮ লেন মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করেছি। এই মেট্রোরেল ৩টি লাইন নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়েই যাবে। আমার নারায়ণগঞ্জেও একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি।কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প করেছি। শেখ রাসেল নগর পার্ক, চীফ জুডিশিয়াল ভবন, র্যাব কার্যালয়, আলীগঞ্জে ৮টি ১৫ তলা ভবনে ৬৭২টি ফ্ল্যাট, টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ফলিত পুষ্টিবিদ ভবন, ভূমিহীনদের জন্য বাসস্থানসহ অসংখ্য উন্নয়ন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ হবে একটি স্মার্ট সিটি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজও করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি থাকলে পেছনের দিকে যায়। আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে দুঃশাসন, দুর্নীতি করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো মানুষের ওপর অত্যাচার করে।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমার অঙ্গীকার ছিল কোনো কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীনদের ভূমি দিয়েছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করেছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়েছি। এখন আর শিশুদের জন্য বই কিনতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। তবে আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। অযথা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষের নতুনভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন দেওয়া।’ ‘আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের প্রাচীন প্রজ্ঞাশীল সংগঠন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা কারোর ওপর মুখাপেক্ষী না। কারোর ওপর নির্ভর করবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার সময়ে বিনা টাকায় টিকা দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের প্রনোদনা দিয়েছি। শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছি। দলিত সম্প্রদায়ের আরও ফ্ল্যাট বানিয়ে দেবো। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বানিয়েছি। সারাদেশে আমরা ৮ হাজারের বেশী ডিজিটাল সেন্টার করেছি। আমরা ৫ কোটি পরিবারকে কার্ড করে দিয়েছি। ১ জানুয়ারী আমরা সারাদেশে বিনামূল্যে বই দিয়েছি। আমরা ১০১টি আইটি শিল্পপার্ক করেছি। দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। আমরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি মানুষ হত্যা করে। অগ্নিসন্ত্রাস করছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। পুলিশকে হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতি বাড়িতে হামলা করেছে। নারীদের মিছিলে হায়েনাদের মতো হামলা করেছে। ’
বেকারদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। বেকার থাকার কোন অর্থ নেই। প্রবাসী ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন। ভিটে মাটি বিক্রি করতে হবেনা। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের থেকে ঋন নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন। আমরা পেনশন স্কীম করেছি। আপনারা এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখবেননা। আমি কিন্তু ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। গণভবনকে ছোটখাটো একটা খামারবাড়িতে পরিণত করেছি। আমার গ্রামের বাড়ির জমিতেও আবাদ শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে। তবে আওয়ামীলীগ ছাড়া এই উন্নয়ন কেউ ধরে রাখতে পারবেনা। রাখতে চেষ্টাও করবেনা। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উ্ন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের তরুন সমাজ শিক্ষায় দিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলবো। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছেন। নৌকা মার্কা আমাদের মার্কা। এই নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর নৌকা। যেই নৌকা মহাপ্লাবনে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের জয় যুক্ত করবেন। অবশ্য নৌকায় আবার লাঙ্গলও চড়ে বসেছে। সেদিকটাও দেখবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী আবু হাসনাত মুহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু প্রমুখ।