ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা

পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা

বাংলাদেশ থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসনের অবসান ঘটেছে। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও বেকায়দায় পড়ে গেছেন দলটির এমপি-মন্ত্রীরা। সুযোগ বুঝে অনেকে দেশ ছাড়তে পারলেও আটকে পড়া এমপি-মন্ত্রী ও অসংখ্য নেতাকর্মী এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরমধ্যে অনেকে আবার বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয়ও চেয়েছেন।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতের পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। তার তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্তে বেশ কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী দেশ ছাড়তে না পেরে গা ঢাকা দেন। এমনকি, মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছেন বলেও খবর গুঞ্জন ওঠেছে।

সূত্রমতে, শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গা ঢাকা দেন। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে কথা বললেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে মিডিয়ায় কথা কম বলতে দেখা যায় তাকে। গত শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেষবারের মতো কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তবে রোববার থেকে তাকে কোথাও দেখা যায়নি।

আরেকটি সূত্র বলছে, রোববার রাতেই দেশত্যাগ করেছেন ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর রয়েছেন। অন্য একটি সূত্র বলছে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন।

সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার ভোর থেকেই প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত এমপি-মন্ত্রীদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। অনেকের মুঠোফোন বন্ধ ছিল। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। এর আগে হাসিনা সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিমানযোগে দেশ ছাড়েন। তবে তারা কে কোন দেশে গেছেন তা জানা যায়নি।

এছাড়া, কয়েকজন মন্ত্রী জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরুর পরপরই দেশ ছেড়ে যান। পরে বৈরী পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা আর দেশে ফেরা নিরাপদ বলে মনে করেননি। রোববার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা ইকে ৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটযোগে দেশ ত্যাগ করেন। তাদের গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দর। মূলত এর পরপরই গণহারে মন্ত্রী-এমপিদের দেশ ত্যাগের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র জানায়, এমপি-মন্ত্রীদের অনেকে শেষ মুহূর্তে শত চেষ্টা করেও আর দেশ ছাড়তে পারেননি। রোববার ও সোমবার দু’দিন টিকিটের জন্য তারা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বিফল হন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে বিদেশ পাঠাতে পারলেও নিজে আর যেতে পারেননি।

এদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে সোমবার বিকেল পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার বনানীর বাসায় অবস্থান করছিলেন। সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর থেকে তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

এর আগে, রোববার এমপি-মন্ত্রী ও সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের অনেকে বিশেষ প্রটোকল চেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠি দেয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেক-এর সহকারী পরিচালক নাছিমা শাহীনের সই করা তালিকা অনুযায়ী দেশ ছাড়া এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে পূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির (বিজি ৩৯৮), সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (বিজি ৫৮৪), স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম (বিজি ৩৮৮), সাবেক হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী (বিজি ৩৮৮), কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ (বিজি ৩৮৮) ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (ইকে ৫৮৭), এমপি নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী ও তার পরিবার (ইকে ৫৮৫), উত্তরা এলাকার সাবেক এমপি হাবিব হাসান (বিজি ৫৮৪) এবং জেপি প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (এসকিউ ৪৭৪) নম্বর ফ্লাইটযোগে দেশ ছাড়েন।

এদিকে, পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জনসমাগম এড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই নিজ বাসা বা সরকারি বাংলোতে না গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, যারা ঢাকায় রয়েছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেননি, তারা নিজ নিজ বাসায় না গিয়ে স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছেন।

এছাড়া, গত রোববার বিদেশ ভ্রমণ করার কথা ছিল বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, ভিআইপি ও সিআইপির। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের মাধ্যমে যারা বিদেশ ভ্রমণের করেছেন তাদের নাম এখনও জানা যায়নি।

স্বৈরাচার,হাসিনা,পুলিশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত