লক্ষণ সেনের মতো দেশ ছেড়ে পালালেন শেখ হাসিনা: ডা. শফিকুর রহমান

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, তিনি যেটা কালিমা হিসেবে জাতির কপালে লিখে দিতে চেয়েছিলেন। জাতি এটা তার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমন রাজনীতি করলেন, বললেন উন্নয়নের রাজপথে দেশকে উঠিয়ে দিয়েছেন। বললেন বাংলাদেশ বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল। এমন বানালেন, আর এমন রাজপথ তৈরি করলেন, গাড়িটা রাজপথ দিয়ে চালিয়ে আপনি যেতে পারলেন না। এমন রাজনীতি করলেন আপনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো। সাড়ে ৮ শ বছর আগে লক্ষণ সেন গিয়েছিলো, আর আপনি গেলেন তার পরে।

সোমবার (১৬সেপ্টেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের মাগফেরাত ও আহত ও শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়েছে। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির মতো মানুষকে বলা হয়েছে তিনি ধর্ষক। তিনি খুনি, তিনি লুটেরাজ, তিনি অগ্নিসংযোগকারী। সময় বদলায়, পরিবেশ বদলায়। সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। সত্য মাটির নিচ থেকে উঠে আসে। এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে গণ অধিকার পরিষদের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক বন্ধুদের। কালো আইনে টেনে হিঁচড়ে নেয়া হয়েছে তাদের জেলে। তারা কাউকে বাদ দেয়নি। সবাইকে নিষিদ্ধ করেছে। সবাই রাজাকার।

তিনি বলেন, দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হাজার খানেকের মতো আমাদের কলিজার টুকরারা জীবন দিয়েছেন। এখানে কোন দলমত নাই। এখানে কোন ধর্ম নাই। এখানে সকল ধর্মের মানুষ অংশ গ্রহণ করেছেন, সকল ধর্মের মানুষই মারা গিয়েছেন। হিত হয়েছে, আহত হয়েছে। শহিদদের আমরা কোন দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না। এই শহিদরা জাতির সম্পদ, এই শহিদরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। এই শহিদরা আজীবন জাতীয় বীর। আমরা তাদের সেই মর্যাদায় দেখতে চাই। যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের নিয়ে কোন দল যেন ক্রেডিট নেয়ার চেষ্টা না করি। এটা আমাদের সকলের ত্যাগের ফসল। তাহলে সকলের প্রতি সম্মান দেখানো হবে।

আতদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আহতদের পাশে যাবেন। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, তাদেরকে একটু উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। দুই একটা দেশের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা যদি একটু এগিয়ে আসে, এই সমস্ত দুখী মানুষের বিরাট উপকার হবে। যারা এগিয়ে আসবেন, তাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে আমরা কবুল করবো।

বিগত সরকারের শাসনামল নিয়ে বলেন, ১৭ বছর ৬ মাস এ জাতি বন্ধিত্বের নিকট বাঁধা ছিলো। মুখে ছিলো তালা, হাতে ছিলো হ্যান্ডকাপ, পায়ে ছিলো বেরি। এ দেশের ১৫ কোটি মানুষ ছিলো মজলুম। রাস্তায় যে ভাই বা বোন ভিক্ষা করতেন তিনিও ছিলেন মজলুম। বিগত সরকারের সময় ভিক্ষুকদেরও চাঁদা দিতে হতো। প্রত্যেকটি মানুষই ছিলো জুলুমের শিকার।

শফিকুর রহমান বলেন, শহিদ নিজামী বলেছিলেন, আমার রক্ত বাংলাদেশে কথা বলবে। আমার রক্ত বাংলাদেশের পরিবর্তনের সূচনা করবে। সাড়ে ১৫ বছর এরা জাতির উপর স্টিম রুলার চালিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছেন জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের উপর। আমাদের মতো মজলুম সংগঠন আর কেউ না। আর কারো এতো গুলো নেতাকে হত্যা করা হয়নি। আর কারো বাড়ি ঘর বুলডুজার দিয়ে ভাঙা হয়নি। আর কারো বাড়ি ঘরে আগুন ও লুটপাট করা হয়নি। আমাদের পর্দাশীল মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের নির্যাতন নিয়ে বলেণ, যে সাংবাদিক ভাই বিদেশে বসে অন্যায়, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন দেশের তার পরিবারের কোন বোনকে টেনে নিয়ে টানা হেঁচড়া করা হয়েছে। কোন ভাই ফেসবুকে কিছু লিখলে, আজরাইল রূপি ডিবি তার ঘরে গিয়েছে। তাদের হেনস্থা করা হয়েছে।

জেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। এতে বক্তব্য রাখেন ধনবাড়ীর নিহত একরামুল হক সাজিদের পিতা জিয়াউল হক, সৈয়দা আক্তার, জেলা বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনকারী মনিরুল ইসলাম, জেলা শিবিরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মতিউল্লাহ, শহর শিবিরি সভাপতি মামুন আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
এ সময় বিভিন্ন উপজেলা জামায়াত ও শিবারের ছয় সহশ্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। শেষে শহিদ আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান।