বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহতদের তালিকা তৈরী করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আন্দোলনে নিহত পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা জরুরী। আহতদের তালিকা তৈরী করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব আধুনিক ভিআইপি হলরুমে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত পরিবারের সদস্য ও আহতদের সাথে সাক্ষাত ও সাহায্যকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
আন্দোলনে নিহত ও আহতদের কথা বলতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার কাছে খুবই হৃদয় বিদারক। আজকে এ অনুষ্ঠানে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে একটি ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলিতে আহত হয়েছেন। অনেক বাবা এসেছেন যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন। তারা জানেনা যে তাদের ছেলে কি কারণে শহীদ হয়েছেন। এখানে অনেকেই আছেন যাদের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। কারও পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে আমাদের এ বিষয়টি দেখতে হয়েছে। আজকে ২৪ সালে আমাদেরই দেশে নিজেদের দেশের বিশেষ দলের সাথে ফ্যাসিস্ট এর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে।
আজকে সেনাবাহীনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমার মতে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে না। আমাদের মতে তখনই এ ক্ষমতা দেওয়া দরকার যখন মনে হবে সংবিধানে নিয়মের বাহিরে চলে গেছে। কিন্তু এ সংবিধান এখনও ভাল আছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতা কর্মীরাই সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সেখানে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মানে নতুন নতুন সমস্যা তৈরী করা। সে কারনে আমি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো এ বিষয়টি তারা পুন:বিবেচনা করবেন এবং কখনই তারা এমন কোন ব্যবস্থা নিবেন না যাতে করে রাজনৈতিক বা সমগ্র দেশের মানুষের অকল্যাণ বয়ে আনে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক দল। আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এখন নাই। এখন অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়। তারা চেষ্টা করছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্ত বিষয়গুলির বিচার করতে। এ অপরাধের যিনি মূল হোতা শেখ হাসিনা, যার নির্দেশে হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। ২০১২ সাল থেকে এ জাতীয় হত্যাকান্ডগুলো শুরু হয়েছে। আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে এ অবস্থার মোকাবেলা করছি। আমাদের দলের প্রায় ৭শ এর বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। হাজার-হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এখানে যারা বসে আছেন কেউ বাদ নেই যাদের নামে ৮/১০ টি মামলা হয়নি। আমি এগারোবার জেলে গেছি। আমাদের দলের সভানেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজাপ্রাপ্ত করিয়ে দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কত জনকে ব্যবসা হারাতে হয়েছে, জমি হারাতে হয়েছে। চাকুরী হারাতে হয়েছে তার হিসেব নেই। নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার এ বিষয়গুলির উপলব্ধি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। এটি আমি স্পস্প করে বলছি, এটা আমার দায়িত্ব। আমরা ১৫/১৬ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করছি, মার খেয়েছি কারণ ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো: শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুরসহ জেলা বিএনপি ও এর সহযোগি অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এবং নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যগণ। জেলা বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত পরিবারের সদস্য ও আহতদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার সাহায্য তুলে দেন মির্জা ফখরুল।