বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায় ভারত
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড ও ভারত সরকারের বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা। এটি পরিকল্পিত। ভারতের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড উসকানি দিচ্ছে। তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। সেইসাথে ভারত বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তকমা দিতে চায় বলে মনে করে বিএনপি।
দলটির নেতারা মনে করেন, দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, যাতে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা যায়। এসব ঘটনার সঙ্গে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ইন্ধন আছে বলেও মনে করেন তারা।
গত সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় দলটির নেতাদের পর্যালোচনায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। এদিন এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতের উত্তর আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে উগ্রবাদীদের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতি’ নামের সংগঠনের সদস্যরা সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে আক্রমণ করেছে, তা পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা হয়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
বৈঠকে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে নিয়ে ভারতের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার পর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, ভারতের আচরণ কূটনীতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। তারা অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
দুই দেশের মধ্যকার চলমান ঘটনাবলি প্রসঙ্গে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান আমাদের সময়কে বলেন, দলের অবস্থান গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ আরেকজন নেতা বলেন, স্পর্শকাতর বিষয়ে দলের বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন দেখে ও বুঝে নিতে হবে দলের অবস্থান। অথবা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য অথবা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলন থেকে দলের অবস্থান বুঝে নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ভারতের অভ্যন্তরে অনেক ঘটনা ঘটে। সেখানে অনেক মুসলিম ধর্মীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মুসলমাদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বাংলাদেশ কূটনীতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া
দেখায়নি। তা হলে বাংলাদেশের বিষয়ে হঠাৎ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা পরিবর্তন হলো কেন?
বৈঠক সূত্র জানায়, ভারতের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি আজকালের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবে। এ সময় ভারতের সম্প্রতি ও আগের কর্মকাণ্ডের একটি ডকুমেন্টারি দেখানোর কথা রয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমদু টুকু বলেন, ভারত অযাচিতভাবে বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এটি কোনোভাবেই প্রতিবেশীসুলভ আচরণ হতে পারে না। ভারতের অভ্যন্তরীণ অনেক সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেও আমরা কূটনীতিক শিষ্টাচার অতিক্রম করিনি। শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তাদের মাঝে হাসিনাপ্রীতি ব্যাপকভাবে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব তারা চায় না।
২১ আগস্ট মামলার রায়ে সন্তুষ্ট
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে নেতারা বলেন, এ রায়ে প্রমাণ হয়েছেÑ মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক ছিল। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাটি করা হয়েছে। বৈঠকে দলের নেতারা বলেন, পতিত শেখ হাসিনা জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার প্রকল্প নিয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার তারই একটি অংশ।
বিএনপিও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে
বৈঠকে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, টাকাপাচারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। দলটি পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সরকারের উদ্যোগ চায়। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, বিএনপি দলীয়ভাবে অর্থপাচারসহ পুরো অর্থনীতির বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। সেখানে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে দলের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তা সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে তুলে ধরবে।
১৬ ডিসেম্বর কনসার্ট করবে বিএনপি
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি দেশীয় শিল্পীদের নিয়ে ঢাকায় বড় ধরনের কনসার্টের আয়োজন করবে। অনুষ্ঠানে নতুনত্ব ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ২১ ডিসেম্বর কনসার্ট করবে। ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ শিরোনামের এই দাতব্য কনসার্টে গাইবেন জনপ্রিয় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। বৈঠকে এই কনসার্টের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে আলোচনা হওয়ার পর বিএনপিও একই রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে দেশীয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন বলে জানা গেছে।