দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে করে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। তাহলে পরাজিত শক্তির সব চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন।’
আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এনপিপির আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকার যে সংস্কারগুলো করতে চাইছে, সেগুলো শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। জনগণ ঠিক করবে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে। জনগণকে হেয় করার কোনো সুযোগ নেই। জনগণ ঠিক করবে তাদের সরকার কে হবে। তারা সরকারকে রক্ষা করতে পারে, সরকারকে বিদায় করতে পারে, এটা এ দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে। এই সরকারকে আমরা সমর্থন করেছি। এজন্য সমর্থন করেছি যে এই সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের সবার প্রয়োজন, জাতির প্রয়োজন যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেছেন যে, শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকারের যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো তারা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সেই সব ক্ষেত্রে সংস্কার করা তাদের ওয়াদা। আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নির্বাচনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার সাধন করা এবং নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেয়া। এটা (রোডম্যাপ) আমরা আগেও বলেছি, বুধবার আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে ডেকেছিলেন, সেখানেও আমরা ভালোভাবে এটা উপস্থাপন করেছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে ‘বিদেশি প্রভুদের নিয়ে পতিত স্বৈরাচার’ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা দেখছি, ষড়যন্ত্র চলছে। আগের যে সরকার, স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট চিহ্নিতরা এই ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সম্প্র্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। আজকে ভারত থেকে শুরু করে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক কেন সমস্যা সৃষ্টি করছেন? কেন আমাদেরকে সারা বিশ্বে মানহানি করছেন? এর একটাই উদ্দেশ্য, সেটি হলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে করে ব্যর্থ হয়, সেজন্য যত রকমের সমস্যা তারা করছে, তারা করবে। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দেশাত্মবোধে বিশ্বাসী, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উন্নতির দিকে যেতে চাই। তাদের আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই ঐক্যের জন্য আমরা এর আগেও আহ্বান জানিয়েছি, বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা তাদের সমর্থন দিয়ে এসেছি যে, আজকে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে লাভ হবে না। এদেশের মানুষের পরিচয় বাংলাদেশি। আমরা বাংলাদেশি, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই জাতিসত্ত্বার পরিচয় দিয়ে গেছেন। যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তারা সফল হতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব। সভায় সভাপতির বক্তৃতায় ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই সেদিন আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করেছিলাম। শেখ হাসিনার আমলে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হয়। অবশেষে ফয়সালা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজপথে হয়েছে। গণতন্ত্র এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ধরে রাখতে হবে। আজকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সরকার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।’
নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ছাত্র নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, জহির উদ্দিন স্বপন, খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, সুরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।