পোশাকে বসন্তের রং

বাংলার সংস্কৃতির ধারায় পহেলা ফাল্গুনে এখন দেশীয় পোশাকের প্রতিষ্ঠান বা ফ্যাশন ডিজাইনাররা বিশেষ পোশাকের রং ও নকশা করে থাকেন। লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজ

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শীত শেষের দিকে। আর শীতের শেষ মানেই বসন্তের আগমন। এবং কয়েকদিন পরেই আসছে পহেলা ফাল্গুন। আর পহেলা ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। বসন্ত মানেই গাছে গাছে নতুন ফুল, নতুন সবুজ কচিপাতা, পাখির সুর, সব মিলিয়ে প্রকৃতির নতুন মুখ।

পহেলা ফাল্গুন নিয়ে আবহমান বাংলায় রয়েছে নানা সংস্কৃতি। সাহিত্যের নানা শাখায়ও পহেলা ফাল্গুন বা ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে রয়েছে নানা রচনা। কবির ভাষায় পহেলা ফাল্গুন ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত।’ বাংলার সংস্কৃতির ধারায় পহেলা ফাল্গুনে এখন দেশীয় পোশাকের প্রতিষ্ঠান বা ফ্যাশন ডিজাইনাররাও বিশেষ পোশাকের রঙ ও নকশা করে থাকেন। এসব পোশাকের রঙে ও নকশায় পহেলা ফাল্গুনের প্রকৃতির উপস্থাপন দেখা যায় ভিন্ন মাত্রায়।

আড়ংয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার ফয়েজ হাসান বলেন, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, পোশাক বা খাবারের মাধ্যমেই যে কোনো জাতির পরিচয় উপস্থাপন হয়। এর মধ্যে পোশাক অন্যতম মাধ্যম। সেজন্যই আমরা প্রতিবছর ঋতুরাজ বসন্তের রঙের আদলে পোশাক তৈরি করে থাকি। আগে ঋতুর সঙ্গে মানিয়ে পোশাকের ব্যবহার খুব একটা দেখা যেত না। কিন্তু এখন দেশীয় অনেক ফ্যাশন হাউসই ঋতুর সঙ্গে মানিয়ে পোশাক তৈরি করছে। পহেলা ফাল্গুনকে সামনে রেখেও অনেক ফ্যাশন হাউসের পোশাক দেখা যায়। এটা আমাদের এক ধরনের সাংস্কৃতির বিপ্লব ও এর জন্য দেশীয় ফ্যাশন হাউস ও ফ্যাশন ডিজাইনাররাই বেশি ভূমিকা রেখেছেন।

ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে আয়োজন করেছে বসন্ত উৎসবের, পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রীতে নিয়ে এসেছে ফাল্গুনের ছোঁয়া। পাখির রং ও পলাশ ফুল প্রেরণা হয়েছে রঙ বাংলাদেশের এবারের বসন্ত সংগ্রহে। পাখি প্রকৃতির অনিন্দ্য উপহার। রঙের বৈচিত্র্য আর বাহারে চোখ জুড়ায়। রঙধনুর প্রতিটি রংই আছে পাখিদের শরীরে। কখনও একরঙা, কখনও একই রঙের নানা শেড আবার কখনও বহুবর্ণে নান্দনিক। আর পলাশ ফুলের সঙ্গে বসন্তের এক নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এসব রঙে প্রাণিত হয়েছেন রঙ বাংলাদেশের ডিজাইনাররা। তাই কাপড় ক্যানভাস হয়ে উঠেছে বর্ণময়। মোটিফ হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। পাখিদের রং অসংখ্য। এর মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে বিন্যাস ঘটানো হয়েছে চমৎকারভাবে। ফলে প্রতিটি পোশাক হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় ও উৎসবমুখী। মূল রং হিসেবে হলুদ, গোল্ডেন হলুদ, প্যারোট গ্রিন, পেস্ট, নীল, মেজেন্টা, লাল, সাদা, পিচ, মিন্ট, কমলা, লেমন হলুদ ও অলিভ ব্যবহার করা হয়েছে। হাফসিল্ক, স্লাব কটন, পেপার সিল্ক, কটন, লিলেন, লিলেন স্লাব, নেট, ধূপিয়ান ও সেমি পিওর কাপড়ে পোশাকের নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। এর মধ্যে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, অ্যাম্ব্রয়ডারি, হাতের কাজ কারচুপি, কাটিং-সুইং ইত্যাদি।

ফ্যাশন হাউস মেঘের কর্ণধার মিল্টন বলেন, আমাদের সংস্কৃতিকে আমরাই টিকিয়ে রাখব। আর পোশাক সংস্কৃতির অন্যতম বাহক। সেজন্যই আমরা সব সময়ই ঋতুভিত্তিক পোশাকের রং ও নকশা করে থাকি। এ ছাড়া বসন্তকে বলা হয় ঋতুর রাজা। তাই বসন্তে বা পহেলা ফাল্গুনে বরাবরই আমরা নতুন নকশার পোশাক তৈরি করে থাকি। পহেলা ফাল্গুনকে ঘিরে এর মধ্যেই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে নানা রং ও নকশার পোশাক।

দেশী দশের ফ্যাশন হাউস রঙ, নগরদোলা, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, সাদাকালো, নিপুণ, দেশাল ও বাংলার মেলা পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে এনেছে বাহারি সব রং ও নকশার পোশাক। এসব পোশাকের রঙে প্রাধান্য পেয়েছে হলুদ রং ও বসন্তের নানা রঙের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস লা রিভ, মেঘ, কারুপল্লীসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে পোশাক এনেছে। দেশীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠান আড়ং বরাবরের মতো এবারও পহেলা ফাল্গুনে নানা রং ও নকশার পোশাক এনেছে। এসব ফ্যাশন হাউস পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে এনেছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক। অনেক ফ্যাশন হাউস একই রং ও নকশার পোশাক এনেছে কাপলদের জন্য। আবার অনেক ফ্যাশন হাউস কাপলদের সঙ্গে মিল রেখে শিশুদের জন্য ও পহেলা ফাল্গুনের পোশাক এনেছে। অর্থাৎ পরিবারের সবার জন্যই একই রং ও নকশার পোশাক কেনা যাবে অনেক ফ্যাশন হাউস থেকে। ফাল্গুনের পাশাপাশি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যেও দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো নানা রং ও নকশার পোশাক এনেছে। এসব পোশাকে ভালোবাসার রং ছড়ানো হয়েছে নানা মাত্রায়। ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ, লা রিভ, নগরদোলা, মেঘসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসও ভালোবাসা দিবসে এনেছে নানা পোশাক। এ ছাড়া উৎসবের পরিপূর্ণতার জন্য অনেক হাউসে আছে একই থিমের যুগল পোশাক। এ ছাড়া দেশীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পোশাক এনেছে। বিশেষ করে কাপলদের জন্য রয়েছে বিশেষ আয়োজন।