ফাল্গুনের সাজ-পোশাক

অনেকটা দেখতে দেখতেই চলে এলো ঋতুরাজ বসন্ত। আর বসন্তকে বরণ করতে চলছে প্রস্তুতি। সেইসঙ্গে নিজেকে বসন্তের দিন সাজাতে সবাই করছেন নানা পরিকল্পনা। লিখেছেন -সুমাইয়া আক্তার

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গাছের নতুন কুঁড়ি আর ফুলের সুবাস জানান দিচ্ছে দুয়ারে কড়া নাড়ছে বসন্ত। এ ছাড়া চারদিকে চলছে ফাগুনের আগমনী গান। অনেকটা দেখতে দেখতেই চলে এলো ঋতুরাজ বসন্ত। আর বসন্তকে বরণ করতে চলছে প্রস্তুতি। নিজেকে বসন্তের দিন সাজাতে সবাই করছেন নানা পরিকল্পনা। এ ছাড়া পহেলা ফাল্গুন নিয়ে আবহমান বাংলায় রয়েছে নানা সংস্কৃতি। সাহিত্যের নানা শাখায়ও পহেলা ফাল্গুন বা ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে রয়েছে নানা রচনা। কবির ভাষায় পহেলা ফাল্গুন ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত।’ বাংলার সংস্কৃতির ধারায় পহেলা ফাল্গুনে এখন দেশীয় পোশাকের প্রতিষ্ঠান বা ফ্যাশন ডিজাইনাররাও বিশেষ পোশাকের রং ও নকশা করে থাকেন। আর দেশীয় পোশাকের সঙ্গে সাজটাও দেশীয় হওয়া চাই। এ ছাড়া নারীদের বেলায় ফাল্গুনের সাজে শাড়িই বেশি প্রাধান্য পায়।

বসন্তের সাজে নারীরা এক প্যাঁচের শাড়ি পড়তে পারেন। তবে কেউ চাইলে কাঁধে আঁচল ফেলে শাড়ি পরতে পারেন। অবশ্য বসন্তের সাজের জন্য অবশ্যই আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেকে মেকআপে সরাসরি ফাউন্ডেশন বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেন। তবে এভাবে না করে একটু প্লেন করে ত্বকে সানস্কিন লাগিয়ে নিতে পারেন। বসন্তের উৎসব যেহেতু দিনের বেলায় হয়, তাই স্বাভাবিকভাবে রোদ থাকবে। সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে মেকআপের আগে। সেজন্য আগে ত্বক ময়েশ্চারাইজিং করে নিতে পারলে ভালো। চাইলে টোনিং করে নিতে পারেন। আরও ভালো হয় মেকআপ প্রাইমার করে নিলে। আর নো মেকআপ লুকে মেকআপ প্রাইমার লাগবেই। ব্লেন্ডিং ভালো করে করতে হবে যেন মেকআপ কোনো কারণে ভেসে না ওঠে। আর বসন্তের সাজ খুব একটা ভারি না করাই মানানসই।

বসন্তের উৎসব দিনের বেলায় হয় বলে সাজটা হবে একদম ন্যাচারাল। অনেকটা নো মেকআপ লুক টাইপ। চাইলে আইশ্যাডো দিতে পারেন। সাজে উজ্জ্বলতা আনতে হালকা আইশ্যাডো দরকারি হয়। আর নো মেকআপ লুকে সাধারণত ব্রাউনি শেড ভালো লাগে। তবে হালকা লাল শেড দেয়া যায়। আর ব্রাউনকে একটু রেড লুকে নিলেও ভালো লাগবে।

এখন উইং আইলাইনার খুব ভালো চলছে। চাইলে উইং আইলাইনারও করতে পারে। ন্যাচারাল থেকেও চোখটাকে যদি কেউ এভাবে হাইলাইট করে তবে ভালো লাগবে। লিপস্টিক কালারফুল হলে ভালো হয়। বিশেষ করে লাল রঙের লিপস্টিক ভালো যায়। আর লাল রং যদি ভালো না লাগে তবে অন্য রংও ব্যবহার করতে পারেন।

বসন্তে শাড়ি পড়লে চুলে হাফ খোঁপা করলে ভালো দেখাবে। তবে সঙ্গে ফুল জড়িয়ে নিবেন, এতে আরও সৌন্দর্য বের হয়ে আসবে। ঘুলের ক্ষেত্রে গোলাপ, গাঁদা, কসমস, জিনিয়া ইত্যাদি কালারফুল ফুল বেশ মানাবে। চাইলে টিপ পরতে পারেন। কানে ঝুমকা জাতীয় গহনা শাড়ির সঙ্গে সুন্দর লাগবে। কাচের চুড়ি। চাইলে অন্য চুড়িও পাড়তে পারেন। তবে চুড়ি পড়লে একটি বেশিই পড়তে হবে। যেনো হাত ভরা দেখায়। আবার মাথায় ফুলের ব্যান্ডেনাও পরতে পারেন।

বসন্তের দিন শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার কামিজও পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রেও ন্যাচারাল মেকআপ ভালো। সাজে ফুল থাকাটা জরুরি। অন্যদিকে টিনএজের মেয়েরা চাইলে কুর্তা, টপ কিংবা গাউন পরেও বসন্তের ভালো লাগবে। তবে মেকআপের ক্ষেত্রে নো লকু মেকআপই মানাবে। মূলত বসন্ত একটি কালারফুল উৎসব। তাই ন্যাচারাল মেকআপে নিজেকে যতোটা প্রকাশ করা যায় ততোটাই ভালো।

এ ছাড়া ফাল্গুন আসার সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়াতেও পরিবর্তন আসছে। এ সময় বাতাসের সঙ্গে ধুলোবালি উড়তে থাকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে মুখে সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে পারেন। আর ঘরোয়া পদ্ধতিতে মসুরের ডাল, টমেটো, শসা, লেবুর রস, মধু ইত্যাদি দিয়ে ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে পারেন। সঙ্গে চুলও পরিষ্কার রাখুন।

বসন্তের সাজে ছেলেদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি সবচেয়ে মানানসই। চাইলে ফতুয়া বা শার্টও পরতে পারেন। তবে যতোটা কালারফুল পরা যায় ততোটাই ভালো লাগবে।

এখন পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে এখন দেশীয় পোশাকের প্রতিষ্ঠান বা ফ্যাশন ডিজাইনাররাও বিশেষ পোশাকের রং ও নকশা করে থাকেন। এসব পোশাকের রঙে ও নকশায় পহেলা ফাল্গুনের প্রকৃতির উপস্থাপন দেখা যায় ভিন্ন মাত্রায়। এবারও বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ফাল্গুনের নানা পোশাক এনেছে। দেশী দশের ফ্যাশন হাউস রং, নগরদোলা, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, সাদাকালো, নিপুন, দেশাল ও বাংলার মেলা পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে এনেছে বাহারি সব রং ও নকশার পোশাক। এসব পোশাকের রঙে প্রাধান্য পেয়েছে হলুদ রং ও বসন্তের নানা রঙের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস লা রিভ, মেঘ, কারুপল্লীসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে পোশাক এনেছে। দেশীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠান আড়ং বরাবরের মতো এবারও পহেলা ফাল্গুনে নানা রং ও নকশার পোশাক এনেছে। এসব ফ্যাশন হাউস পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে এনেছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক। অনেক ফ্যাশন হাউস একই রং ও নকশার পোশাক এনেছে কাপলদের জন্য। আবার অনেক ফ্যাশন হাউস কাপলদের সঙ্গে মিল রেখে শিশুদের জন্যও পহেলা ফাল্গুনের পোশাক এনেছে।