মাতৃভাষা বা সংস্কৃতি চর্চায় পরিবারই পাঠশালা

পরিবারের কাছ থেকেই আমরা মাতৃভাষা বা নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে থাকি। তাই নিজের ভাষা বা সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবার বা বাবা-মার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজ

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নিজের ভাষা, নিজের সংস্কৃতি, নিজের ঐতিহ্য শেখার বা জানার প্রথম জায়গা বা প্রতিষ্ঠান হলো আমাদের পরিবার। বলা যায় পরিবারের কাছ থেকেই মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে তার মাতৃভাষা ও নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। আর পরিবারের প্রধান হলেন বাবা-মা। সেজন্য আমাদের মাতৃভাষা বা নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রথম অনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রই হলো আমাদের বাবা-মা। এ ছাড়া সন্তানরা যদি তার পরিবারের কাছ থেকেই তার মাতৃভাষা ও নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে তাহলে সে বড় হয়েও সেসব ভাষা বা সংস্কৃতি চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। সেজন্য নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মা বা পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

এ ছাড়া বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার জন্য আমরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জীবন দিয়েছি। সেজন্য একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। আর এ ভাষাকে মাতৃভাষা করার জন্য আমাদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। এ ছাড়া বাংলা ভাষারও রয়েছে অনেক ঐতিহ্য। এ ভাষায় রচিত হয়েছে অনেক গল্প-কবিতা-উপন্যাস-গান। এ ভাষায় লিখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। সব মিলিয়ে বাংলার রয়েছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য আর এসব গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সন্তানকে জানাত হবে। আর এ জানানোর অন্যতম ও প্রধান হলো পরিবার ও বাবা-মা।

এ ছাড় সন্তান যদি তার মাতৃভাষার চেতনা ও ঐহিত্য সম্পর্কে পরিবারের কাছ থেকে জানে, তাহলে সে ছোটবেলা থেকেই এ ভাষার প্রতি আলাদা ভালোবাসা বা চেতনা নিয়ে বড় হবে।

তবে কেবল পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেই নয়, সন্তানকে নিজের ভাষা বা সংস্কৃতি সম্পর্কে বাড়তি ধারণা দিতে প্রয়োজন ভাষাবিষয়ক গল্প-কবিতা-ছড়া বা শিশুতোষ বই পড়ানো। পাশাপাশি ভাষাবিষয়ক জাদুঘর পরিদর্শন করানো। ভাষাবিষয়ক জাদুঘর আছে বাংলা একাডেমিতে। এ ছাড়া শাহবাগের বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে আলাদা গ্যালারি আছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভাষাশহীদ আবদুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা রয়েছে। এটি ঢাকার পলাশীর মোড়ে অবস্থিত। আগারওগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও আছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। আজকাল ভাষা আন্দোলনবিষয়ক বা মাতৃভাষাবিষয়ক অনেক উপহার সামগ্রী বা সুভেনিওর পাওয়া যায়। যেমন মগ, চাবির রিং, খাতা-কলম ইত্যাদি। তবে এসবের পাশাপাশি দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে তৈরি করছে বর্ণমালায় আচ্ছাদিত পোশাক। প্রতি বছরই ফ্যাশন হাউসগুলো অমর একুশে উপলক্ষ্যে আলাদা আলাদা থিম ধরে তাদের পোশাকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে উপস্থাপন করে থাকে। কোনো ফ্যাশন হাউস শহীদ মিনারের ছবি, কোনো হাউস বাংলা বর্ণমালা, আবার কোনো হাউস নকশা করে থাকে ভাষা আন্দোলনের পোস্টার, গান, কবিতা বা নানা স্মারক দিয়ে। তবে ঘুরেফিরে প্রায় সব হাউজের পোশাকেই প্রাধান্য পায় ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব। আর এসব নকশা করা হয়ে থাকে সাদা, কালো, লালসহ নানা মাধ্যমের রঙে।

মূলত পোশাক এক ধরনের চলমান ক্যানভাস। আর এ ক্যানভাসে কিছু উপস্থাপন হলে তা অনেক বেশি প্রচার বা প্রসার পায়। তাই এ ক্যানভাস সহজেই মানুষের আরও কাছে পৌঁছাতে পারে। ফলে এর মাধ্যমে যেকোনো তথ্য সহজে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের পোশাকে একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে সেই চলমান ক্যানভাসটাকে সাধারণ মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে জানতে পারছেন।