ফ্যাশনে রোদচশমা
গাজী মুনছুর আজিজ
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এ সময়ে ধুলাবালির ওড়াউড়ি একটু বেশিই দেখা যায়। তাই ধুলাবালি যখন-তখন ঢুকে পড়তে পারে চোখের ভেতর। ফলে চোখে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। সেজন্য ধুলাবালি থেকে চোখকে রক্ষা করতে সানগ্লাস বা রোদচশমা ব্যবহার করা যতে পারে। আবার ঝাঁজালো রোদ থেকে চোখকে একটু আরাম দিতেও রোদচশমার বিকল্প নেই। তাই রোদচশমা বাড়তি অনুষঙ্গ নয়, বরং প্রয়োজনীয়।
এ ছাড়া হাল ফ্যাশনে রোদচশমার ব্যবহার অনেকের কাছেই মামুলি ব্যাপার। বিশেষ করে এ সময়ে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীর নাকের ওপর রোদচশমা বসে থাকাটা অনেকটা অলেখা চুক্তির মতোই। তবে প্রয়োজনে হোক বা রোদের জন্যই হোক, রোদচশমাকে এ সময়ে অনেকেই বাড়তি ফ্যাশনের অনুষঙ্গ মনে করেন।
ফ্যাশনের ব্যাকরণের ছাঁচে যে যার মতো মানিয়ে রোদচশমা ব্যবহার করেন। তবে কেউ কেউ ব্যাকরণ মানেন না বটে। তাদের ভাষায় পোশাক-আশাক বা অন্য যে কোনো অনুষঙ্গ নিজের যেটা ভালো লাগে বা কমফোর্ট ফিল হয় সেটা ব্যবহার করাটাই আসল ফ্যাশন।
প্রয়োজনে বা ফ্যাশনের জন্য রোদচশমা ব্যবহারে ব্যাকরণ না মানলেও চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই সবার মানা জরুরি। কারণ হালের ফ্যাশনে তাল মিলাতে গিয়ে, কিংবা ধুলাবালি থেকে চোখ নিরাপদ রাখতে নিজের ইচ্ছামতো রোদচশমা ব্যবহার করে ভালোর চেয়ে ক্ষতিও হতে পারে। তাই একটু সচেতনভাবেই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানান, সূর্যের আলো থেকে চোখকে নিরাপদ রাখতে সানগ্লাস ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া যারা মোটরসাইকেল চালান তাদের সানগ্লাস ব্যবহার করাটা বেশি জরুরি। তবে সানগ্লাস কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সানগ্লাস সুন্দরের চেয়ে যেন এর কার্যকারিতা বেশি হয়। যে সানগ্লাস প্রকৃত অর্থেই সূর্যের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রেখে আপনার চোখকে আরাম দিতে পারবে, সেই সানগ্লাসই কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। ফ্যাশন ডিজাইনার আকাশ বলেন, দামি বা সুন্দর সানগ্লাস ব্যবহার না করে বরং মানানসই সানগ্লাস বা রোদচশমা ব্যবহার করাটা জরুরি।
গোলগাল মুখের জন্য ক্যাটস আই বা অ্যাভিয়েটর ফ্রেমের রোদচশমা ব্যবহার করা ভালো। এটা চোখের ভ্রু খানিকটা ঢেকে রেখে আপনার গোল চেহারাকে কিছুটা হলেও লম্বাটে দেখাবে। সেজন্য আয়তাকার, কোণযুক্ত বালকা ফ্রেমের সানগ্লাস ব্যবহার করাটাই ভালো।
যাদের মুখ ডিম্বাকৃতি বা পানপাতার আকৃতির, তারা ব্যবহার করতে পারেন গোল ফ্রেমের রোদচশমা। চারকোনা ফ্রেমের কোনাটা কিছুটা গোলাকৃতি এমন চশমাও এ চেহারায় মানাবে।
হার্ট শেপ চেহারা যাদের, তাদের কপাল চওড়া এবং চোয়াল সরু থাকে। সেজন্য তারা ব্যবহার করতে পারেন ক্যাটস আই, স্পোর্কি টাইপের চশমা। অন্যদিকে চতুর্ভুজাকৃতি চেহারার নারী-পুরুষরা ব্যবহার করতে পারেন বালকা ক্ল্যাসিক ডিম্বাকৃতি কিংবা ক্যাটস আই স্টাইলের চশমা। কারণ গোলকৃতির ফ্রেম সংকীর্ণ চিবুক এবং উঁচু কপালের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
এ ছাড়া বর্গাকৃতির চেহারার নারী-পুরুষ মেটালিক ফ্রেম অথবা গ্লাসের নিচের অংশ রিমলেস চশমা ব্যবহার করতে পারেন। আর লম্বা মুখের সঙ্গে গোলাকৃতির চশমা ভালো মানায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সে চশমার ফ্রেম যেন খুব ছোট না হয়।
উজ্জ্বল গায়ের রঙের সঙ্গে স্বচ্ছ, নীল, সবুজ ফ্রেম চশমা ভালো মানাবে। আর ফর্সা চেহারায় মানাবে লাইট ব্রাউন অথবা গোলাপি শেডের চশমা। অন্যদিকে যাদের গায়ের রং শ্যামলা বা কালো তারা ব্যবহার করতে পারেন মেটালিক ফ্রেম, হালকা বাদামি রঙের চশমা। মূলত নানা রঙের চশমা বাজারে পাওয়া যায়। তবে কিনতে হবে নিজের শরীরের রঙের সঙ্গে মানিয়ে। তাহলেই ফ্যাশনটা আরও ভালো হবে।
তবে রোদচশমা কেবল ব্যবহার করলেই হবে না, তার যত্নও নিতে হবে। সাধারণত চশমা ব্যবহারের পর পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে রাখলে ভালো। পানি দিয়েও মাঝেমধ্যে ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া যাদের চোখে সমস্যা আছে তাদের জন্য রোদচশমা ব্যবহার খুব একটা জরুরি না। তবে ব্যবহার করতে চাইলে চোখের উপযোগী রোদচশমা বানিয়ে নেয়া যেতে পারে।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রোদচশমা পাওয়া যায়। এর মধ্যে আরমানি, পুলিশ, ডিএনজি, রেবন, ওকলে, প্যারাডা ইত্যাদি ব্র্যান্ড পরিচিত। এগুলো কেনা যাবে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। আবার সাধারণ ব্র্যান্ডের রোদচশমাও বাজারে পাবেন। এগুলো কিনতে পারবেন ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে।
যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, বিজয়নগর, পলওয়েল মার্কেট, গাজী ভবনসহ ঢাকার বিভিন্ন শপিংমলে চশমার দোকান আছে। সস্তা দামের চশমা আপনার চোখের ক্ষতি করতে পারে। সেজন্য চশমা কেনার ক্ষেত্রে নিজের মূল্যবান চোখের কথাও ভাবতে হবে।
সতর্কতা হিসেবে সাধারণত নীল রঙের চশমা ব্যবহার না করাটাই ভালো। আর চোখের সমস্যা না থাকলে রাতের বেলা রোদচশমা পরে কারও হাসির পাত্র হবেন না। অন্যদিকে রোদচশমা পরে বা খালি চোখে সরাসরি সূর্যের দিকে না তাকানোই ভালো।