দিনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে থাকি। সহকর্মীদের সঙ্গে আর অফিসের হাজারো কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের। কাজের চাপ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে আমরা সহকর্মীদের সঙ্গে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব করে নিই। অনেক সহকর্মী থেকে ভালো বন্ধু হয়ে যান আমাদের। পরিবার, নিজের দুনিয়া আর অফিসের হাজারো গল্প আমরা সেই সহকর্মী-বন্ধুর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিই। মনের অনেক কথাই কর্মক্ষেত্রে ভাগাভাগি করে নিই তাদের সঙ্গে। আসলেই কি কর্মক্ষেত্রে মনের কথা বলা উচিত? কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী কে, আর বন্ধু কে তা জেনে আচরণ ঠিক করা উচিত।
এমনটাই মনে করেন বেসরকারি সংস্থা ওয়েকআপ বাংলাদেশের উপদেষ্টা রুবিনা খান। তিনি জানান, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীও ভালো বন্ধু হতে পারেন, এমন ক্ষেত্রে বন্ধু হিসেবে অনেক কথা আর গল্প ভাগাভাগি করতে পারি আমরা। তবে অফিসের গল্প কিংবা কাজের কথা বলার সময় সতর্ক থাকা উচিত আমাদের। কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বের অনেক আগে গুরুত্ব পায় পেশাদারি। নিজের দায় ও দায়িত্বের কথা বুঝে আমাদের অফিসে বন্ধুত্ব ও গল্প ভাগাভাগি করা উচিত। পাশাপাশি অনেক দিন কাজ করতে গেলে পরস্পরের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কর্মক্ষেত্রে বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা বেশ জরুরি। ‘সহকর্মী মাত্রই যে ভালো বন্ধু হবেন, তা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। ‘অফিস পলিটিকস’ কিংবা কাজের ঝামেলায় অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তির মূল কারণ হয়ে ওঠেন আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সেই মানুষ। সহকর্মী ও বন্ধু-দুটি দুই সম্পর্ক। দুই পরিচয়ে মানুষের আচরণ ভিন্ন রকম হবে, এটাই স্বাভাবিক।’ বলেন সামাজিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ওয়াইড অ্যাঙ্গেল বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক উষান আরা। অফিসের সবাই আপনার সহকর্মী, কিন্তু সবাই বন্ধু না-ও হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিত্বই নির্ধারণ করে দেয়, কে হবেন আপনার সহকর্মী আর কে হবেন আপনার বন্ধু। বন্ধু আর সহকর্মীর সঙ্গে আমাদের আচরণ ভিন্নই হয়। সহকর্মী বন্ধু হলেই তাকেও সব সময় ‘প্রাণের বন্ধু’ ভাবা ঠিক নয়। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের পরিসংখ্যান মতে, কর্মক্ষেত্রে কাজের বাইরের বিভিন্ন ঝামেলায় যাদের আমরা বন্ধু ভেবে অনেক কথা বলি, তাতেই বিপত্তি ঘটে। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা দুনিয়া অফিসে সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ করাকেই গুরুত্ব দেয়। সবার আগে কাজ, কাজই আপনাদের নির্ধারণ করে দেবে, কে হবেন বন্ধু, কে হবেন না।
সহকর্মীকে বন্ধু ভাবার সময় : নিজের কাজের গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। অফিসের গল্প যেকোনো ক্ষেত্রে কারও বিপক্ষে আক্রমণাত্মক বা হাস্যকর যেন না হয়।এতে সহকর্মী-বন্ধুর বিপত্তিতে বিব্রত হতে পারেন আপনি। সহকর্মী-বন্ধু আর কর্মক্ষেত্র-বন্ধুত্বের মধ্যে বেশ বড় মাপের সীমানা থাকে, সেই সীমানা বুঝে আচরণ করুন। কারো সঙ্গে এমন বন্ধুত্ব করা ঠিক না, যাতে অফিসের অন্য সহকর্মীরা অখুশি হন। সংখ্যায় বন্ধু না বাড়িয়ে আচরণে বন্ধুসুলভ মানসিকতা বিকাশে নজর দিতে হবে।