কমপক্ষে ১০০ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই : ফাহিম

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এসএমএম ফাহিম। ব্যবসা করেন। তার দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রথমটা MaktabahBd মাকতাবাহবিডি এটা বইয়ের প্ল্যাটফর্ম। দ্বিতীয়টা kidyZz কিডিজ এই প্ল্যাটফর্মটা শিশুদের এডুকেশনাল টয় নিয়ে। ব্যবসার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জীবন শৈলীর সঙ্গে-

আপনি কীভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন?

আমি মূলত চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিএসই ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন এই উদ্যোগের কথা ভাবি। তখন করোনাকালীন সময়ে অনেকটা অবসর সময়ই কাটাচ্ছিলাম, ক্লাস নিয়ে একরকম অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলামণ্ড সেসময় ই-কমার্স ব্যবসায় সময় দেয়া শুরু করি। আর ডেভেলপিংয়ের বেসিক নলেজ থাকায়, নিজের ওয়েবসাইটটা নিজেই তৈরি করে ফেলি পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন, এডিটিংয়ের ব্যাপারটাও পড়াশুনার মাঝে নিজেরই করতে হয়েছিল।

ব্যবসার শুরুতে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে?

যেহেতু ছাত্র অবস্থায় শুরু করেছিলাম, সেহেতু ফান্ডিং সংকট আর লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসায় সময় দেয়া বড় ইস্যু ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রথম বর্ষ থেকেই টিউশনি করানোর কারণে কিছুটা ব্যক্তিগত সঞ্চয় ছিল। সেটাই ব্যবসায় মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করি। আর এ সময় আমার ছোটবেলার বন্ধু ‘ইশরাক আবিদ’কে ব্যবসায় পার্টনারশিপের জন্য প্রস্তাব করলে, সেও আগ্রহী হয়। আমি তখন চট্টগ্রামে থাকায়, আবিদ ঢাকায় ব্যবসার যাবতীয় দিকটা দেখভাল করে। এরপর আমরা দুইজন মিলে ছোট ছোট করে এগিয়ে, আজকের অবস্থানে আলহামদুলিল্লাহ। ২০২২ এর শেষদিকে এসে আমাদের ভালো একটা ফান্ডিংয়েরও ব্যবস্থা হয়। আমাদের এখন প্রতিদিন ২০০-৩০০ এর মতো পার্সেল ডেলিভারি হয় এবং আমাদের টিমে ১০-১২ জনের মতো মেধাবী তরুণ-তরুণী কাজ করছে আলহামদুলিল্লাহ।

এখন কি কি প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হচ্ছে?

একটা স্টার্টাপে আপনাকে সব সময়ই ফান্ডিংয়ের দিকে তাকাতে হবে, বর্তমানে আমরাও তেমনই কিছু খুঁজছি যেটা আমাদের ব্যবসাকে পরবর্তী ধাপে নিতে সহায়তা করবে। এছাড়া, নিয়মিত আমাদের কিছু ফ্রড কাস্টমারদেরও মুখোমুখি হতে হয়- যাদের কারণে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের টিমকে। দেশে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক কিছু আইন তৈরি হলে আমাদের পথচলা আরো সহজ হবে বলে মনে করি।

আপনার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক কী পরিবর্তন আনতে চান?

যে কোনো বই আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই। আমাদের মূল লক্ষ্য একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরিতে অবদান রাখা। মানুষ বর্তমানে জ্ঞান ও মূল্যবোধ অর্জন থেকে চিত্ত-বিনোদনে একটু বেশিই সময় দিচ্ছে। কিন্তু দেশকে গড়তে আমাদের তরুণদের বিনোদনের পাশাপাশি জ্ঞান-বুদ্ধি ও নৈতিকতার চর্চাও সমানভাবে করা দরকার। আমার কাছে মনে হয়, আমরা এই দিকটায় আরো বেশি নজর দিতে পারি।

ব্যবসার এতো মাধ্যম থাকতে শিশুদের পণ্যকে বেছে নিলেন কেন?

ওই যে বললাম জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখা। আমাদের করফুতু প্ল্যাটফর্মে আমরা সেসব পণ্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দিচ্ছি, যেগুলো একইসঙ্গে বাচ্চাদের জন্য চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষামূলক।

শিশুরা খেলার ছলে শিখতে পারবে, এরকম ইউনিক কিছু খেলনা আমরা চায়না থেকে আমদানির ব্যবস্থা করে আমাদের অভিভাবকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি।

নুতন যারা ব্যবসায় যুক্ত হতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী তাদের আমি বলব, তারা যেন সময়কে কাজে লাগায়। আমরা চাইলেই আমাদের চারপাশে একটা পরিবর্তন আনতে পারি। উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের সমাজ যে খুব একটা সহায়ক তা কিন্তু না, কারণ চাকরিকেন্দ্রিক একটা মানসিকতা আমাদের মাঝে বিরাজ করে। তাই, মানসিকতা শক্ত করে এগোনোর মনোবল যাদের থাকবে, তাদেরই ব্যবসায় আসা উচিত বলে আমি মনে করি। আরেকটা পরামর্শ দিব- সেটা হচ্ছে ‘Be your own investor’।

ছাত্র অবস্থাতেই নিজেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হোন যেন লোন নেয়া ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে সক্ষম হন।

আপনার ব্যবসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কি?

সব সময় যে কোন পরিস্থিতিতে সততা বজায় রাখার চেষ্টা করা। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকের অসন্তুষ্টিকে মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

পাঁচ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

আমি আসলে এতো দূর ভাবি না, তবে লক্ষ্য থাকে সব সময়ই প্রতিদন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। তাই, একটা দিন অবসরে কাটালে মনটা খারাপ হয়ে যায়। শুধু সবার কাছে দোয়া চাই, যেন মানুষের জীবন পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারি। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য যদি বলেন, পরবর্তী পাঁচ বছরে কমপক্ষে ১০০ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই ইনশাআল্লাহ।