গরমে অনেকেই শাড়ি এড়িয়ে চলেন। তারপরও মাঝে মধ্যে শাড়ি না পরলেই নয়। আর এমন পরিস্থিতিতে সব থেকে আরামদায়ক সুতি শাড়ি। গরমে শরীরে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং ঘাম শুষে নিতে পারে এমন শাড়ি পরা উচিত। আর এজন্য গরমে সুতি শাড়ি আরামদায়ক। অনেকের ধারণা সুতি শাড়ি বুঝি সাবেকি ঘরানার। সুতি শাড়ি ঐতিহ্যবাহী কিংবা সাবেকি ঘরানার ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে এ শাড়ি দারুণ স্টাইলিস্টও বটে। যুগ যুগ ধরে সুতি শাড়ি তার রঙ-রূপ পাল্টেছে কিন্তু এর কদর কমেনি এতটুকুন।
বুননে বৈচিত্র্য : বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোটা, ফাইন সুতি, সুতি প্রিন্ট, তাঁত, টাঙ্গাইলের তাঁত, মনিপুরি তাঁত, জামদানি সুতি, জ্যাকার্ডসহ নানারকম সুতি শাড়ি রয়েছে। সুতির মিশ্রণে তৈরি সিল্ক তাঁত, হাফ সিল্ক সুতি শাড়িতেও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দারুণ সব নকশা। যা পরতেও আরামদায়ক। আবার বুননে দুই তিন ধরনের ফেব্রিকের মিশ্রণেও তৈরি হচ্ছে সুতি শাড়ি। অনেক ক্ষেত্রে জমিন সিল্কের হলে আঁচল তৈরি হচ্ছে সুতিতে। মূলত মোটিফে ভিন্নতা আনার জন্যই এমনটা করা হয়।
নকশায় নতুনত্ব : সুতি শাড়ি যেমন আরামদায়ক, তেমনি এর রূপ ও রং বৈচিত্র্য সব বয়সির জন্য মানানসই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুতি শাড়ির আঁচল এবং পাড়ে নানা বৈচিত্র্য নিয়ে আসছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। কুঁচিতেও থাকছে আলাদা ডিজাইন। কোনো কোনো সুতি শাড়ির বুননেই থাকছে পাড়। আবার আলাদা নকশা করা পাড়ও জুড়ে দেয়া হচ্ছে পুরো শাড়িতে। জমিনজুড়ে থাকছে বাহারি নকশা। কিছু সুতি শাড়ির জমিন, আঁচল, পাড়ে রয়েছে কাঁথা স্টিচ, ফুলেল প্রিন্ট, জামদানি প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, গুজরাটি কাজের মতো বাহারি নকশা। কারচুপি, চুমকি, অ্যাম্ব্রয়ডারি, ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, অ্যাপ্লিক কাজের সিল্ক তাঁত, তাঁত, কোটা সুতি শাড়িগুলো বেশ গর্জিয়াস হওয়ায়, এগুলো অনায়াসে পরতে পারেন যে কোনো পার্টিতে।
সতেজ থাকতে : এ মৌসুমে হালকা কাজ বা নকশার শাড়ি বেছে নেয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে একরঙা জমিন, চিকন পাড় আর হালকা নকশার আঁচলের শাড়ি বেছে নেয়া যেতে পারে। হালকা প্রিন্ট বা জলছাপ, বাটিক বা ব্লকের শাড়িও এ সময় আরামদায়ক। অনুষ্ঠান বা রাতের আয়োজনে ভিন্ন কিছু পরতে চাইলে অনায়াসে পরে নিতে পারেন সুতির মিশ্রণে তৈরি সিল্ক তাঁত, হাফ সিল্ক সুতি কিংবা সুতি জামদানি। গরমে গাঢ় রঙ এড়িয়ে চলুন। এ সময় লেমন, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ, সাদা, চাঁপা সাদা, হালকা বেগুনি, ঘিয়া, বাদামি, আকাশীর মতো যে কোনো হালকা শেড পরলে একটা স্নিগ্ধভাব আসে। দিনভর সতেজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।
স্টাইলিস্ট লুক আনতে : পরার ধরনে ভিন্নতা এনে সুতি শাড়িতে হয়ে উঠতে পারেন দারুণ স্টাইলিস্ট। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের ভিন্ন ভিন্ন কাটও পাল্টে দিতে পারে আপনার আউটলুক। শাড়ির রঙ, পরার ধরন ও অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে থ্রি কোয়ার্টার হাতা, স্লিভলেস কিংবা ভিন্ন কোনো নকশার ব্লাউজ বেছে নিতে পারেন। গরমে পিছনের দিকটা চওড়া ও খোলা গলার ব্লাউজে আরাম পাওয়া যাবে। ব্লাউজের গলায় পাইপিং বা লেইস বসিয়ে ভিন্নতা আনতে পারে। তাঁতের শাড়ির সঙ্গে হাইনেক, স্লিভলেস, বেন্ড কলার, বোট কলার গলার ব্লাউজ পরতে পারেন রাতের অনুষ্ঠানে। স্টাইলিশ লুক আনতে সাদামাটা একরঙা ব্লাউজের পরিবর্তে পরতে পারেন প্রিন্ট, চুন্দি, ব্লক-বাটিকের ব্লাউজ।
স্নিগ্ধ সাজ : সুতি শাড়ির সঙ্গে স্নিগ্ধ একটি সাজ বেছে নিন। গরমে চুল ছেড়ে না রেখে বেঁধে রাখলেই বেশি ভালো লাগবে। ভারি মেকআপ এড়িয়ে চলুন। বৈচিত্র্য আনতে পারেন গহনাতে। সুতি শাড়ি বলেই যে সব সময় সাদামাটা গহনা পরতে হবে তা কিন্তু নয়। ধাবত, মাটি, মেটাল, কাঠ, কুন্দন, পুঁতি, স্টোন, গোল্ড, পার্লসহ প্রায় সব ধরনের গহনাই মানিয়ে যায় সুতি শাড়ির সঙ্গে। ফিউশন গহনাতেও আনতে পারেন বৈচিত্র্য। বিয়ের দাওয়াতে চওড়া সোনালি পাড়ের সাদা সুতির শাড়ির সঙ্গে সোনার গয়না পরে নিলেও কাতান বা অন্য যে কোনো শাড়ির চেয়ে কম জমকালো দেখাবে না।