ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিত্যদিনের সঙ্গী হোক বই

নিত্যদিনের সঙ্গী হোক বই

বই নিয়ে লিও টলস্টয়ের বিখ্যাত উক্তিটি হচ্ছে, ‘জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই।’ বই পড়া ছাড়া মস্তিষ্ক যেমন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে, তেমনি মননশীলতার উন্নয়ন ঘটে না। জীবনকে সাজাতে বইয়ের প্রয়োজন। বই মানুষকে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে তৈরি করে। বই অন্তরের চক্ষু খুলে দিয়ে আলোর পৃথিবী দেখিয়ে দেয়। বই হচ্ছে সেই বন্ধু, যে একজন মানুষকে তার ভালো মন্দ বিচারের সর্বোত্তম পরামর্শ দিয়ে থাকে। বই সম্পর্কে হেনরি ওয়ার্ড বিশার বলেছেন, ‘বইয়ের মতো ভালো সঙ্গী আর কিছু নেই। বইয়ের সঙ্গে কথা বলা যায়, বই উপদেশ দেয়, কিন্তু কিছু করতে বাধ্য করে না।’ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কিছু বই পড়ে কেউ সুশিক্ষিত হতে পারবে না। বই বিমুখ জাতি কখনও জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি সাধন করতে পারে না। বই না পড়লে মানুষের ভেতর মানবিকতাবোধ, দায়িত্ববোধ, মমত্ববোধ জন্ম হয় না। তৈরি হয় না আবেগ অনুভূতির মতো নিখাদ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সৃষ্টি হয় না, দয়া-মায়া আর সহযোগিতার মনোভাব। একমাত্র বই-ই পারে মানুষের ভেতর ভালোবাসা তৈরি করতে। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বই পড়ার বিকল্প নেই। বইয়ের ছোঁয়ায় মানুষের জীবন আমূল পাল্টে যেতে বাধ্য। আজ থেকে প্রায় আটশ বছর আগে পারস্য কবি ও দার্শনিক ওমর খৈয়াম বলেছিলেন, ‘একদিন রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’ বন্ধু বন্ধুকে ভুলে যেতে পারে। প্রিয়তমা বিগত দিনের সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু বই কখনও তার পাঠককে ভুলে যায় না। বই তার পাঠককে ভুল পথে পরিচালিত করে না। একটি ভালো বই সব সময় একজন মানুষকে সঠিক পথেই পরিচালিত করে। সঠিক পথের পতাকাবাহী হয় বই-ই। বই পাঠ মানুষকে সত্য কথা বলতে, সত্য পথে চলতে, মানবতার কল্যাণে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। বই সুখের সময় মানুষের পাশে থাকে, দুঃখের সময় মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে। এ দিনের কথা সেদিনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উৎকৃষ্ট পন্থা হলো বই। বরীন্দ্রনাথের কথা এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে- ‘শব্দকে নিঃশব্দের মধ্যে বেঁধে, সঙ্গীতকে, হৃদয়ের আশাকে, জাগ্রত আত্মার আনন্দ ধ্বনিকে, আকাশের দৈববাণীকে’ কাগজে মুড়ে পাঠকের করকমলে পৌঁছে ‘মানুষ অতীতকে বর্তমানে বন্দি’ করেছে আর ‘অতলস্পর্শ কাল সমুদ্রের ওপর সাঁকো বেঁধে দিয়েছে’। আর বই সংরক্ষণের জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যেকের উচিত ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে সুশিক্ষিত জাতি গঠনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। বই হোক সবার জীবনের পথ চলার পাথেয়। বই হোক নিত্যসঙ্গী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত