তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থায় সারা দেশ। ঘরের বাইরে বা ঘরের ভেতরে থাকা রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। আজও তাপমাত্রা কোথাও ৪০, কোথাও আবার ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যেও অনেকে এদিক-ওদিক ঘুরতে যাচ্ছেন। তবে এ রকম চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় ভ্রমণে কিছু শারীরিক ঝুঁকি আছে। তাই কিছু সতর্কতামূলক বিষয় মাথায় রেখে বাইরে যাওয়া উচিত।
যেসব সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন-
এ রকম দাবদাহে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকা উচিত, তা হলো ‘হিটস্ট্রোক’। এটা একধরনের মেডিকেল ইমারজেন্সি। এ রকম হলে মানুষ অজ্ঞান পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, যা থেকে শরীরে পানিশূন্যতা ও খনিজ লবণের ঘাটতি হতে পারে। এ থেকে শরীর দুর্বলতা, বমিভাব, মাথাধরা, মাথাব্যথা হতে পারে। একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি, বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে এ রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সুতরাং ভ্রমণের সময় তাদের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা প্রয়োজন।
ভ্রমণে বাইরে বের হলে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি-
কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকলে বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেরোলে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন
১. তাপমাত্রা জেনে নেয়া : যেদিন যাত্রা করছেন, সেদিনের তাপমাত্রার খোঁজ তো রাখবেনই, একই সঙ্গে ছুটির দিনগুলো যে এলাকায় থাকবেন, সে সময় সেখানকার আবহাওয়া কেমন থাকবে তার অগ্রিম খবর নিন। যদি গরম কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকে, তবে তেমন কোনো চিন্তার কারণ নেই। আর যদি তা না হয়, তবে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
২. পাতলা জামাকাপড় পরুন : ভ্রমণের সময় আরামদায়ক একটু পাতলা পোশাক পরুন। এই গরমে সুতির পোশাক হতে পারে সবচেয়ে আরামদায়ক। ভুলেও সিনথেটিকের কোনো পোশাক পরতে যাবেন না। এতে পুরো পথ অস্বস্তিতে ভুগবেন। এ সময় হালকা রঙের পোশাক পরুন। এতে গরম কম অনুভূত হবে।
৩. সঙ্গে খাবার পানি নিন : গ্রীষ্মে আমাদের প্রচুর পানি পিপাষা লাগে। কারণ, গরমে ঘামের সাথে প্রচুর পানি আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। আর আপনি যখন ভ্রমণে থাকেন তখন এর পরিমাণটা আরও বেশি থাকে। তাই ভ্রমণে সাথে করে অবশ্যই খাবর পানি নিয়ে যাবেন। খাবার পানি নেয়ার জন্য আপনি পানির ছোট বোতল দোকান থেকে কিনতে পারেন। এটা আপনার ট্রাভেল ব্যাগের সাথে খুব সহজেই বহন করতে পারবেন। পথেই যদি ইফতারের সময় হয়ে যায় তাহলে এই পানি খেতে পারবেন।
৪. খাবার স্যালাইন নিন : গ্রীষ্মে প্রচণ্ড রোদে অনেক সময় শুধু পানি আপনাকে ক্লান্তি এবং ডি-হাইড্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। তাই সাথে করে খাবার স্যালাইন নিয়ে নিন। কারণ, ঘামের সাথে প্রচুর লবণ আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। যার ফলে আপনার ডি-হাইড্রেশন হতে পারে। তাই সাথে করে খাবার স্যালাইন নিয়ে যাওয়া উত্তম। আপনি যেকোনো ফার্মেসি থেকে অথবা মুদি দোকান থেকে এই খাবার স্যালাইন কিনতে পারেন।
৫. সানগ্লাস ব্যবহার করুন : প্রচণ্ড রোদে আপনি যখন কোনো দিকে ঠিক মতো তাকাতে পারছেন না, তখন আপনার একমাত্র ভরসা হচ্ছে সানগ্লাস। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা, আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য রোদে সানগ্লাস দেয়া অতি জরুরি। এতে আপনার চোখ রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাবে। সঙ্গে রোদ থেকে বাঁচার জন্য ছাতা, ক্যাপ ও সানস্ক্রিন সাথে রাখতে পারেন।
৬. যাত্রার আগে ভারী খাবার নয় : একে তো গরম, তার ওপর রোজা। তাই যাত্রার আগে সেহরি বা ইফতারে ভারী খাবার একদমই খাবেন না। এর বদলে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির বোতল রাখুন। যেকোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে। পথেই যদি ইফতার বা সেহরি খেতে হয়, তবে সেই ব্যবস্থা করেই বের হোন। কারণ পথের খাবার অস্বাস্থ্যকর হওয়ার ভয় বেশি থাকে।
৭. টিস্যু বা রুমাল নিন : ভ্রমণের সময় সাথে করে টিস্যু বা রুমাল নিন। গরমে আপনি যখন ঘেমে ক্লান্ত তখন ঘাম মুছার জন্য আপনি এই টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করতে পারেন। একজন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যখন খুব বেশি থাকে তখন তার ঘাড়ে যদি কোনো ভেজা তোয়ালে রাখা হয়, তখন তার পুরো শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত কমে আসে।
৮. ফার্স্ট এইড : ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবার সময় ফাস্ট এইড বক্স নিতে ভুল করবেন না। কথায় আছে, সাবধানের মার নেই। তাই সতর্কতা হিসেবে এ ধরনের একটি বক্স সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনীয় ও জরুরি ওষুধপত্র তাতে রাখুন। কারণ হাতের কাছে সব সময় সব ওষুধ নাও থাকতে পারে। ফাস্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখলে প্রয়োজনে কাজে দেবে।
৯. রাতে ভ্রমণ : যদি সম্ভব হয়, তবে রাতের বেলা ভ্রমণের চেষ্টা করুন। এ সময় গরমের তীব্রতা কম থাকে। আর পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা থাকলে সুতির মোজা পরে বের হতে পারেন।
১০. ছায়ায় থাকার চেষ্টা করুন : বাইরে বের হলেও ছায়া আছে, এ রকম জায়গায় অবস্থান করুন। খুব প্রয়োজন না হলে হোটেল বা রিসোর্টের শীতল স্থানে অবস্থান করুন।
এছাড়া এ রকম দুঃসহ গরমে খুব প্রয়োজন না হলে ঘরে অবস্থানই উত্তম। যদি একান্ত প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে বেড়ানোর আগে এসব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে উচ্চ তাপমাত্রা-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।