ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারীর পশ্চিমা পোশাকের ইতিকথা

নারীর পশ্চিমা পোশাকের ইতিকথা

আজকে আমাদের দেশের শহরগুলোর চারিদিকে তাকালেই মানুষের পরনে দেখা যায় বহুবিধ ওয়েস্টার্ন পোশাক। আধুনিক সময়ে পোশাক দেখে ধর্ম পরিচয় নির্ণয় করাটা ঠিক সম্ভব নয়, সেটি শোভনও নয়। তবে ইংরেজ শাসন বা ভারত ভাগের পরও বাংলায় পুরুষদের ধর্মপরিচয় নির্ণয় করা যেত তাদের পরনের পোশাক দেখে। তবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি নারীরা শাড়ি পরতেন। এমনকি শ’খানেক বছর আগে কিন্তু শাড়ির সাথে ব্লাউজ পেটিকোট পরার রীতি এমনকি অভিজাতদের মধ্যেও ছিল না, আর নিম্নবিত্তদের কথা তো বাদই দেওয়া যায়। একসময় সালোয়ার কামিজের উপর কিছুটা নির্ভরতা এলেও, শাড়ি এখনো আছে বহাল তবিয়তে। তবে আধুনিক সময়ে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পোশাকের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে এখন দেখা যাবে আমাদের শহরের নারী সমাজের বেশ বড় একটা অংশ, বিশেষ করে তরুণী ও যুবতীরা এখন অনেকেই পছন্দ করেন টিশার্ট, টপস, জিন্সসহ বিভিন্ন ওয়েস্টার্ন পোশাক। নানা ধরনের ওয়েস্টার্ন পোশাক নানা জায়গাতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পরা যায়, মানানসইও হয়, সেকারণে এর প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে।

তবে ঠিক কখন আর কীভাবে যে বাংলার আমজনতার গায়ে জিন্স আর টিশার্ট উঠে এলো, তা সঠিক বলাটা খুব মুশকিল। ’৪৭-এ ভারত ভাগ হবার পর থেকেই অবশ্য দেশীয় ফ্যাশনে একটা বড় আকারের পরিবর্তন আসে। নতুন দেশের পরিস্থিতি কিছুটা থিতু হয়ে আসার পর পশ্চিমা সিনেমা-গান যেভাবে প্রবেশ করে আমাদের সংস্কৃতিতে, একইভাবে প্রবেশ করে সিনেমার নায়ক আর গায়কদের পরিচ্ছদ। ডেনিম জিন্সের উত্থান, ১৯৫০-এর দিকে ‘ব্যাড বয় জিন্স’ এর কাটতি আর নায়কদের অনুকরণপ্রিয়তাণ্ড সব মিলিয়ে পোশাক সংস্কৃতিতে একটা ভালো রকম পরিবর্তন শুরু হয়েছিল সেসময়। ’৬০-এর দিকে যখন হিপ্পি আন্দোলন শুরু হলো, আমেরিকায় একটা বিরাট সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দেখা দেয় তখন। সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও যে বেশ লেগেছিল এই বাংলাতেও, পাকিস্তান আমলের বেল বটম প্যান্ট পরা যুবকসমাজ আর নায়কদের ছবি তারই প্রমাণ দেয়। স্বাধীনতার পরও এই চল অব্যাহত ছিল। বিশেষত একটা বড় সময় পরে এসে আমাদের দেশে হিপহপ ক্রেজ তৈরির পর ব্যাগি বা ঢোলা জিন্স, বেসবল ক্যাপ আর ফুলহাতা টিশার্টের ফ্যাশন ছিলো দারুণভাবে চোখে লাগার মতো। তবে উপমহাদেশের রক্ষণশীল সমাজের কারণে পুরুষদের মতো অত দ্রুত এগোতে না পারলেও কিন্তু পিছিয়ে ছিলেন না নারীরাও। সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের ফ্যাশনে পরিবর্তন তারা এনেছেনই। সত্তরের দশক থেকেই অভিজাত ও ধনী তরুণীরা ডেনিমের স্কার্ট আর ভেস্ট পরতে পছন্দ করতেন।

১৯৮০তে ডিজাইনার জিন্স আর ১৯৯০-এ ‘গ্রাঞ্জ’ মিউজিকের বদৌলতে ওভারঅলের মতো দেখতে আপাদমস্তক জিন্সের পোশাকও চলেছিল দেশে। আর ২০০০-এর পর ব্রিটনি স্পিয়ার্সের মতো পপ তারকাদের প্রভাবে স্কিনি জিন্সের যে চল শুরু হয়েছিল শহুরে আধুনিক তরুণী সমাজের মধ্যে, তা এখনও চলছে, তবে আর সেটা কোনো সুপারস্টারের অনুকরণে নয়, একেবারে নিজস্ব অভ্যাস হিসেবেই। সেই সাথে কুর্তী, প্লাজো, শেমিজ, ফতুয়া- ফ্যাশন অনুসঙ্গগুলোতে পরিবর্তন এসেছে বেশ ক’বার, কখনো সরাসরি পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে, কখনো বা হলিউড কিংবা বলিউড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। নারীরা শুধুই যে পশ্চিমা পোশাক পরেছেন তা নয়, বরং দেশি শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজের সাথে পশ্চিমা আনুষাঙ্গিক মিলিয়ে নিজেরাই তৈরি করেছেন ফ্যাশনের নতুন ধারা। আর জ্যাকেট, হুডি, স্যুটের মতো ওয়েস্টার্ন পোশাকগুলো তো নারী-পুরুষ উভয়েই এখন পরে থাকেন স্বচ্ছন্দে। একসময় পোশাকি নামে ওয়েস্টার্ন হিসেবে পরিচিত হলেও, প্যান্ট, শার্ট, কোট, জিন্স, টিশার্ট, টপস, স্কার্ট এধরনের পোশাক কিন্তু এখন আমাদের একদম নিজস্ব পোশাকে পরিণত হচ্ছে। বরং বিশেষ করে শহরগুলোতে নিজেদের মতো করে নকশার পরিবর্তন ঘটিয়ে এসব পোশাককে আমরা একেবারে আপন করে নিয়েছি। আসছে সময়ে হয়তো আরো নতুন নতুন পোশাকের আগমনের ফলে আজকের এই পোশাকগুলো হয়ে উঠবে একেবারেই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। দেশে দেশে কালে কালে, মানুষের রুচি আর পছন্দ যে এভাবেই বদলায়!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত