তামার পাত্রের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। বর্তমানে সুন্দর ডিজাইনের প্ল্যাস্টিক ও বিভিন্ন ধাতবের তৈরি পাত্র সহজলভ্য হলেও তামার পাত্রের কদর আজও কমেনি। আয়ুর্বেদে বলা হয়, তামা ও পিতলের পাত্রে পান করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষ করে তামার পাত্রে পানি পান করলে রোগব্যাধি অনেক দূরে থাকে।
তাই প্লাস্টিকের বা অন্য কোনো ধাতুর তৈরি পাত্রের পরিবর্তে তামার পাত্র ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছেন আয়ুর্বেদরা। তামার পাত্রে পানি পান করলে কী কী উপকার মিলবে চলুন জেনে নিই
অ্যানিমিয়া দূর করে : পানিতে আয়রন সঞ্চার করতে পারে তামা। ফলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়তে পারে। এজন্যই তামার পাত্রে পানি পান করলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও শরীরে আয়রন কমে শ্বেত রক্তকণিকাও কমতে থাকলে, সেই সমস্যাও দূর করতে পারে তামা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া খুব প্রয়োজনীয়। তামা, পানির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে : তামায় মজুত উপাদানগুলো পাকস্থলীর ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। এছাড়াও যকৃতে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। যাদের পেটের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আলসার, গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা, বদহজম বা অন্যান্য কোনো পেটের সমস্যা আছে, তারা তামার পাত্রেই পানি পান করুন।
বাতের সমস্যা কমায় : তামার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গাঁটে গাঁটে ব্যথায় উপশম দেয়। সেই সঙ্গে বাত বা আর্থরাইটিস কমে যায় তামার পাত্রে নিয়মিত পানি পান করলে।
ওজন কমাতে পারে : তামার পাত্রে নিয়মিত পানি পান করলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ঝরতে শুরু করে। এর ফলে মেদ অনেক কমে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : বিশেষজ্ঞদের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, তামার পাত্রে পানি পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি বা হৃদরোগের সমস্যাকেও দূরে রাখে।
থাইরয়েড গ্রন্থির কাজে ভারসাম্য বজায় রাখে : থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ আটকাতে পারে তামা। যার ফলে এর কাজে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়।
ক্যান্সার দূর করে : তামায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারবিরোধী। পানির সঙ্গে এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মিশে শরীরের কোষ বিভাজনের সঠিক প্রক্রিয়ায় নজর রাখে। যার ফলে ক্যান্সার দূরে থাকার সম্ভবনা থাকে।
যৌবন ধরে রাখে : তামা ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায়। এছাড়াও এই ধাতু প্রোটিন বাহক হিসেবে কাজ করে, যা চুলের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
তামার পাত্র পরিষ্কার করার নিয়ম : তামা যেমন উপকারী, সেরকম খুব তাড়াতাড়ি কালো দাগ পড়ে যায় এই পাত্রের ওপর। যেটি সহজেই পরিষ্কার করা যায়। উষ্ণ গরম পানির সঙ্গে লবণ ও লেবু মিশিয়ে তামার পাত্র কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর ভালো করে নাড়িয়ে ফেলে দিন। পাত্রের গায়ে লেবু সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ভালো করে ঘষুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। লেবুর রস কম থাকলে ভিনেগার মিশিয়ে নিতে পারেন সঙ্গে। এভাবে খুব সহজে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পরিষ্কার করুন তামার পাত্র।