বর্ষায় ভ্রমণ

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রেজাই রাব্বী

চলেছে বর্ষাকাল। ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস মিলিয়ে বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই বৃষ্টি। গতানুগতিক ভ্রমণের জায়গাগুলো বর্ষায় ধারণ করে নতুন এক রূপ। বর্ষায় প্রকৃতি সেজে ওঠে আরো রং ও রসে। মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বর্ষা। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারে আছে ছোট-বড় অনেক জলপ্রপাত। গহিন পাহাড়ের এই জলপ্রপাতগুলো দেখতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পিছপা হচ্ছেন না রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষরা। বর্ষায় প্রতিটি জলপ্রপাত প্রাণ ফিরে পায়, বিপুল জলপতনের আনন্দে হয়ে ওঠে উচ্ছল। এই বর্ষায় কোনো জলপ্রপাত দর্শনের পরিকল্পনা আপনিও করতে পারেন। শীতল হতে যেতে পারেন পাহাড়ের মাথা থেকে গড়িয়ে পড়া জলধারার নিচে। কারণ বাংলার রূপ যে বর্ষাতেই সবচেয়ে সুন্দর, সে বন্দনা আছে শত লেখকের গল্প, কবিতায়।

টাঙ্গুয়ার হাওর : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধরমপাশা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অনেক নদী, খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জলের ওপর মাথা তুলে ভেসে থাকে শুধু হিজল-করচগাছ। তখন দেখা যায় পাখির ওড়াউড়ি, অনতিদূরে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়।

হাওর ও মেঘ-পাহাড়ের এমন রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর বর্ষায় হাজারো পর্যটক ঘুরতে যান টাঙ্গুয়া।

এবার বর্ষার ভ্রমণ পরিকল্পনায় আপনিও রাখতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওরে কয়েকটি পথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়। তবে সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি ঘাট ও তাহিরপুর উপজেলার নামাবাজার ঘাট পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই দুই ঘাটে বিলাসবহুল হাউসবোটসহ ঐতিহ্যবাহী নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। হাওর ভ্রমণ আরামদায়ক করতে সেখানে যাওয়ার আগেই নৌকা ভাড়ার কাজটি সেরে ফেলতে হবে। নৌকার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে আপনি পেয়ে যাবেন।

সাজেক : বর্ষায় সাজেকের শোভা দেখার পরিকল্পনা আঁটতেই পারেন। তাই ঘুরে আসতে পারেন এই সুন্দর জায়গাটি। বর্ষায় পাহাড়ি প্রকৃতি সবুজ হয়ে ওঠে। পাহাড়ের সবুজে ডানা মেলে সাদা-কালো মেঘ। সবুজের বেষ্টনীতে শুধুই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা! ভোরে বৃষ্টি হলে মেঘ ঢুকে পড়ে শোবার ঘর পর্যন্ত। সাজেকের মেঘ কখনো ধরা দেয় সমুদ্রের রূপে। সবুজ উপত্যকা, অপার্থিব সূর্যোদয়, জোছনায় ছড়িয়ে পড়া মেঘের দল, আকাশের মেঘের অনেক রং মিলিয়ে সাজেক যেন অন্য এক জনপদ। এক জাদুকরি প্রকৃতির রহস্যঘেরা উপত্যকা। সারা দেশে পর্যটকদের পছন্দের নামও সাজেক। পাহাড়ি এই উপত্যকা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়। যাতায়াত করতে হয় খাগড়াছড়ি শহর হয়ে। বর্ষায় সাজেকের শোভা দেখার পরিকল্পনা আঁটতেই পারেন।

ভাসমান পেয়ারা বাজার : কোনোটা সরু, কোনোটা বেশ প্রশস্ত। এই খালগুলো দূরে সন্ধ্যা নদীতে গিয়ে মিশেছে। এসব খালের কোথাও বসতি, কোথাও বৃক্ষবাগান, কোথাও আবার বিঘার পর বিঘা পেয়ারাবাগান। জলমগ্ন এলাকাটা ভিন্ন রূপে ধরা দেয় বর্ষা মৌসুমে। বর্ষার সময় পর্যটকের আনাগোনাও বেড়ে যায়। খাল বেয়ে ট্রলার আর ডিঙিনৌকায় পর্যটকরা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ান। কখনো আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারাবাগান ঘুরে তারা এগিয়ে যান ভীমরুলির ভাসমান বাজারে। অনেকে আবার বিপরীত পথেও আসেন। আশপাশের এলাকার বাগান থেকে তুলে আনা পেয়ারা বিক্রি হয় ভীমরুলি বাজারে। পেয়ারাবাগান আর ভাসমান হাটের কারণেই পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির ভীমরুলি আর পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা। বর্ষায় এক দিনের ভ্রমণে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।

চলনবিল : ভরা বর্ষায় চলনবিল হয়ে ওঠে জল-থইথই। চলনবিল শুধু একটি বিল নয়, অনেক বিল, খাল ও নদী নিয়ে গড়ে ওঠা জলাভূমি। বিলটি বিস্তৃত নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ৬০০টি গ্রাম নিয়ে। বর্ষার অবারিত জলে নৌকায় ভাসতে চলনবিল রাখতে পারেন ভ্রমণতালিকায়। চলনবিলে ঘুরতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের কাছিকাটা অথবা পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর। সবখানেই বাসযোগে যাওয়া যাবে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চাটমোহর অথবা ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজ স্টেশনে নেমে ভাড়ার নৌকায়ও চলনবিল ঘোরা যাবে।