শরতের কাশফুল

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জীবনশৈলী ডেস্ক

বর্ষাকালের শেষে ঋতুর পরিবর্তনে ফিরে আসে শরৎকাল। বাংলায় ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস মিলেই হয় শরৎকাল। প্রকৃতি যেন তার রূপের সবটা শরৎকালকে দিয়ে সাজিয়ে তোলে। মৃদু রৌদ, সাদা সাদা মেঘেদের দৌড়াদৌড়ি, হালকা রোমাঞ্চকর বৃষ্টি, হালকা ঠান্ডা, হালকা গরম সব জুড়ে থাকে শরৎকালে। আকাশে সাদা মেঘ আর রৌদ যেন কানামাছি খেলে। আর এ শরৎকালে প্রকৃতিতে ফোটে কত রকম ফুল।

ফুলের মধ্যে প্রথম বলতে গেলে বলতে হয়, শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুলের কথা। সঙ্গে আরো ফোটে গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, মালতি, টগর, হাসনাহেনা আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ আর লম্বা লম্বা তালগাছে পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই তাল দিয়ে তৈরি করা পিঠা, পায়েস? আর খেতে খেতে আমন ধানের বেড়ে ওঠা চারা। ছোট ছোট পাখিদের বেপরোয়া দাপাদাপি ও মিষ্টি কলতান! ফুটন্ত শিউলির প্রাণ জুড়ানো ঘ্রাণ। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বা ঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকে রাশি রাশি শিউলি ফুল। আমনের মাঠে মাঠে শিশিরসিক্ত সবুজের স্বচ্ছ শামিয়ানা! বাতাসের দাপটে অবিরাম ঢেউ তুলে যায় আমন ধানের খেতজুড়ে। নদীর তীরে শুভ্র সাদা কাশফুলের খিলখিল হাসিতে যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য ঢেলে পড়ার উপক্রম। শরতের আকাশের মতো স্বচ্ছ আকাশ আর কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।

তবে এত এত ফুল আর প্রকৃতির সৌন্দর্যতার পরও মনে করা হয়, কাশফুলের জন্যই শরৎকাল বিখ্যাত। কেননা মানুষ যতটা না শরৎকালকে মাস হিসাবে মনে রাখে তারচেয়ে কাশফুলের জন্য বেশি মনে থাকে। শরৎকালের প্রান্ত বিকালে রৌদ্রের লাল রঙের আলোতে সাদা সাদা কাশফুল আড়ালে সূর্যের লাল আলো যেন লাল-সাদা রঙের খেলা শুরু হয়।

আঠারোবাঁকি কাশবন ভ্রমণ : শরৎকালে কাশফুল দেখার অনুভূতি যে কারো মনে জাগতে পারে। ভ্রমণের অংশ হিসাবে খুলনা বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আঠারোবাঁকি নদীর পাড়ে অবস্থিত কাশবন ভ্রমণ করতে পারেন। এ নদী বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের খুলনা ও নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি নদী। আঠারোটি বাঁকে নদীটি প্রবাহিত হয় বলে নদীটির নাম হয়েছে আঠারোবাঁকি নদী। শরৎকাল এলে এ নদীর তীরে ফুটে ওঠে প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের কাশফুল। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে বাগেরহাট হয়ে মোল্লাহাট উপজেলায় গিয়ে আঠারোবাঁকি নদীর তীরে গড়ে ওঠা কাশফুল বন ভ্রমণ করতে পারেন।

কোদালিয়া বিল ভ্রমণ : বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে কোদালিয়া বিল। এ বিল যেন শরৎকালের এক সৌন্দর্য বর্ধনকারী কাশফুলের খণ্ডাংশ। বিশাল এ বনের পশুপাখিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রয়েছে। শরৎকাল এলে ফুটে ওঠে কাশফুল এ বনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপ্রেমী মানুষেরা ছুটে আসে কোদালিয়া বিলের কাশফুল সাদা শুভ্র দেখার জন্য। চাইলে কাশফুল সৌন্দর্য উপভোগপ্রেমীরা ভ্রমণ করতে পারেন।

দিয়াবাড়ি কাশফুল বন : ইট-পাথরের শহরে শরৎকালের সাদা ফুলের একটু সৌন্দর্যতা উপভোগ কার না ভালো লাগবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারিত প্রকল্পের অংশ হিসাবে ছিল দিয়াবাড়ি। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে এ প্রকল্প এখন ফাঁকাই পড়ে আছে। বালু ফেলে সমতল এ বিশাল মাঠের মতো খোলা জায়গাটি ভরে গেছে শরতের শুভ্র কাশফুলে। কাশবনের ভেতর দিয়ে পথ। ভ্রমণপ্রেমীরা চাইলে ছুটির দিনে বা বিকালে হেঁটে শরৎকালের কাশফুল উপভোগ করতে পারেন। বিকালে যখন সূর্য ডুবন্তের পর্যায়ে চলে যায় তখন কাশফুলের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

আফতাবনগর কাশবন : ঢাকার মধ্যে অন্যতম আরেকটি কাশবন হলো আফতাবনগর কাশবন। শরৎকালের সাদা কাশফুল মহূর্তে যে কারো মন ভরে দিতে পারে। হারিয়ে যেতে পারে অচেনা দেশে। এটির অবস্থান হলো রামপুরা ব্রিজ থেকে উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত জহুরুল ইসলাম সিটির ভেতর দিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে এ কাশবন চোখে পড়বে। ঢাকার এত কাছে আফতাবনগরের এ কাশবন জনপ্রিয়তার দিক থেকে সবার সর্বোচ্চ তালিকায় থাকে।

এ ছাড়া আরো বিভিন্ন কাশবন রয়েছে। যেমন-কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের কালিগঙ্গা নদীর তীর, ঢাকা-মাওয়া সড়কের কুচিয়ামারা ও ধলেশ্বরী নদীর তীর, মায়াদ্বীপ ও মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রচুর কাশফুল ফোটে। এগুলোয় গিয়ে উপভোগ করা যেতে পারে সৌন্দর্য। শরৎকালের সৌন্দর্য হলো কাশফুল। তাই সব প্রকৃতিপ্রেমীদের উচিত কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাওয়া।