বাংলাদেশে নোকিয়া কারখানা স্থাপনের যুক্তরাজ্যভিত্তিক উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী শেয়ার বা অংশীদারিত্ব ছেড়ে চলে গেছেন। আর শেয়ার হস্তান্তর ঘটেছে বিটিআরসিকে না জানিয়েই, পরিবর্তিত হয়েছে কোম্পানির নামও। খবর টেকশহর ডটকম। বিটিআরসি থেকে ‘মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিস্টেটমেন্ট সার্টিফিকেট’ নেয়া ‘ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড’ কোম্পানির নামে। অথচ শেয়ার হস্তান্তর শেষে ‘ইউনিয়ন টেক-পার্ক লিমিটেড’ নামে কার্যক্রম চলতে থাকে। পরে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এ জন্য ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে নাম পরিবর্তন ও শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতি দেয়।
দেশে কারখানা স্থাপন শেষে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ উৎপাদন শুরু হয় নোকিয়ার। এর পর বছর না ঘুরতেই বিনিয়োগকারী কেনো চলে গেলেন, এমন প্রশ্ন এখন। ২০১৭ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ৫ ব্লকে ৫ একর জায়গার বরাদ্দ নিয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক জয়েন্ট ভেঞ্চার ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড, যার বাংলাদেশি অংশীদার ছিল ইউনিয়ন গ্রুপের সিএমপিএল। ইউনিয়ন গ্রুপের মোবাইল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ডিভিশনের কোম্পানি হলো সিএমপিএল। তারা দেশে দীর্ঘদিন ধরেই নোকিয়ার আমদানি ও ডিস্ট্রিবিউশন করেছে। হাইটেক সিটিতে জমি বরাদ্দ নেওয়ার সময় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল যে, ভাইব্র্যান্ট ৪০ মিলিয়ন ডলার বা বর্তমান হিসেবে ৪৩৪ কোটি টাকা প্রায় বিনিয়োগ করবে এতে। যেখানে সাইবার সিটি, ডেটা সেন্টার, মোবাইল ও স্মার্ট ডিভাইসসহ এটিএম কার্ড, স্মার্টকার্ডসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হবে। কিন্তু উদ্ভূত এ ঘটনায় এসব উদ্যোগ-পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে প্রশ্নও খাতসংশ্লিষ্টদের। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হলে বিনিয়োগকারী কিংবা যেকোনো ব্র্যান্ড বিডা হয়ে এফডিআই বা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে কারখানা স্থাপন করতে পারে। ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায়ও এ সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
“আমরা এখন বিদেশে ডিভাইস রপ্তানি করছি, আমেরিকায় ‘আমাদের মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য যাচ্ছে। দেশে মোবাইল ফোন নির্মাণে যে বিপ্লব হয়েছে সেখানে এ খাতের বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে” বলছিলেন তিনি। কারখানা স্থাপনের যৌথ উদ্যোগের শুরুতে সিএমপিএলের প্রতিনিধি রাকিবুল কবিরের শেয়ার ছিল ৩৫ হাজার ও ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার ইউকে লিমিটেডের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মারভিনের শেয়ার ছিল ১৫ হাজার। পরে শেয়ার হস্তান্তরে মারভিনের ১৫ হাজার শেয়ারের মধ্যে ১৩ হাজার রাকিবুল কবিরকে, বাকিটা আলভী রানাকে দেওয়া হয়। বর্তমানে আলভী রানা ইউনিয়ন টেক-পার্ক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ইউনিয়ন গ্রুপের মোবাইল বিভাগের পরিচালকও। টেকশহর ডটকমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যেসব ‘সংবাদ জিজ্ঞাসা’ ছিল তার কাছে
দেশে ব্যাপক সমারোহে যুক্তরাজ্যের ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার ও ইউনিয়ন গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে তৈরি কারখানায় নোকিয়া মোবাইল ফোন তৈরি শুরু হয়। কিন্তু তার কিছু দিন না যেতেই বিদেশের অংশীদার বা বিনিয়োগকারী, ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার চলে যাওয়ার কারণ কী?
বিদেশি বিনিয়োগকারী চলে যাওয়ায় নোকিয়ার মোবাইল ফোন নির্মাণে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা? নতুন করে এমওইউ বা কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে কিনা?
বিদেশি বিনিয়োগকারী চলে যাওয়ায় এককভাবে ‘ইউনিয়ন টেক-পার্ক লিমিটেড’-এর কারখানায় নোকিয়ার যে বৈশ্বিক মান তা নিশ্চিত হচ্ছে কি-না? হলে কীভাবে? শেয়ার হস্তান্তরে ও নাম পরিবর্তনে বিটিআরসির অনুমতি না নেওয়ার কী কারণ? দীর্ঘ এক মাস সময়েও তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রতিনিধি এসব জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারেননি।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ টেকশহর ডটকমকে বলেন, অনিয়ম করেছে বলে বিটিআরসি জরিমানা করেছে। আইন ও নিয়ম মানার বিষয়ে বিটিআরসির অবস্থান স্পষ্ট, নীতিমালার মধ্যে থেকেই সব লাইসেন্সিকে কাজ করতে হবে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মারভিনের সঙ্গে নানা মাধ্যমে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সূত্র : টেকশহর ডটকম।