ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফোর-জির ব্যবহার বাড়াতে ফিচার ফোনে ফোর-জি

ফোর-জির ব্যবহার বাড়াতে ফিচার ফোনে ফোর-জি

দেশে থ্রি-জি নেটওয়ার্ক থাকছে না। এরই মধ্যে থ্রি-জি ফোনের আমদানি ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের মনোযোগ এখন ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে। কিন্তু দেশে সেই অর্থে ফোর-জির ব্যাপক ব্যবহারকারী নেই। যদিও ধীরে ধীরে ফোর-জি ব্যবহারকারী বাড়ছে।

দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৭২ শতাংশ ফিচার বা বার ফোন ব্যবহার করেন। অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে রয়েছে থ্রি-জি, ফোর-জি ও ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সমর্থিত মোবাইল সেট। ফলে ফোর-জি ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম। সরকার তথা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বিভিন্নভাবে ফোর-জি ব্যবহারকারীর হার বাড়ানোর চেষ্টা করেও সুফল পায়নি। তবে চেষ্টা বা উপায় খোঁজার কৌশল কখনও বন্ধ থাকেনি। সম্প্রতি টেলিকম খাতে জোর আলোচনা শোনা যাচ্ছে- টু-জি মোবাইল ফোনে ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ দিলে এ হার বাড়তে পারে।

ক্রেতাকে ফিচার ফোন কিনতে গড়ে খরচ করতে হয় এক হাজার টাকা। সেই ফিচার বা বার ফোনে ব্যবহার করা যায় টু-জি নেটওয়ার্ক। এর সঙ্গে আর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা যোগ করলে সেই ফিচার ফোনে ফোর-জি চিপসেট বসানো সম্ভব হয়। আর এটা সম্ভব হলেই ফিচার ফোনে ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে বাজারে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় একটি স্মার্টফোন পাওয়া যায়। এর চেয়ে কম দামেও এটি মিলতে পারে। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাজারে এর চাহিদা (ফিচার বা বার ফোনে ফোর-জি) আগে তৈরি হতে হবে। ক্রেতা যদি দেখে- সে কম দামে ফোন পাচ্ছে এবং সেই ফোনে ফোর-জি পাওয়া যায়, তাহলে তারা কিনতেও পারে। কারণ, এখানে ক্রেতার প্রয়োজনটা আগে। মোবাইল ফোন উৎপাদকরা পরীক্ষামূলকভাবে এটা করে দেখতে পারে। ক্রেতারা যদি ফিচার ফোন গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা বেশি দামে কেনে, তাহলে এ ধারাটি জনপ্রিয় হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, সরকার তো মোবাইল ফোন তৈরি করে না। যারা উৎপাদক তাদের উৎসাহিত করে। উৎপাদকরা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এবং এটি লাভজনক হলে, তারা তৈরি করতে পারে। আমাদের সমর্থন থাকবে।

টু-জি ফোন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি হিসাব করলে দেখা যাবে, এক সময় টু-জি থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ করে তো আমরা টু-জি বন্ধ করে দিতে পারি না। এটা চিন্তাও করা যায় না। ফোর-জি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ হয়েছে। এখন মানুষের চাহিদার সম্প্রসারণ হলে- আমরা আস্তে আস্তে সেদিকে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা (ফিচার ফোনে ফোর-জি) দেশে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এটা হওয়া দরকার। আমরা বাধা দেব না; বরং সহযোগিতা করব।

ভারতে নকিয়া, আইটেল, মাইক্রোম্যাক্স, আইকল, এলজি (ফোল্ডার), ইনটেক্স, স্নেক্সিয়ান, ক্যাট ব্র্যান্ডের ফিচার ফোনে ফোর-জি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। যদিও এগুলোর মধ্যে কোনও কোনোটিতে টু-জি ও থ্রি-জি সুবিধা রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনও কোনও ব্র্যান্ডের ফোন এরই মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু ব্র্যান্ড শিগগির বাজারে আসবে বলে জানা গেছে।

সরকার সম্প্রতি দেশে ফোর-জি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু ফোর-জি সম্প্রসারণ সেভাবে হচ্ছে না। এর পেছনে বড় কারণ হ্যান্ডসেটের স্বল্পতা। দাম বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে ফোর-জির বিশাল নেটওয়ার্ক এখনও পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা গেছে, বর্তমানে দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৭২ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহার করে, যাতে ব্যবহার হয় টু-জি নেওয়ার্ক। ২৮ শতাংশ ব্যবহার করে স্মার্টফোন, যার মধ্যে রয়েছে- থ্রি-জি, ফোর-জি ও ফাইভ-জি সমর্থিত মোবাইল ফোন। এরমধ্যে গত বছর থেকে দেশে থ্রি-জি মোবাইল ফোনের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ওই সময় থেকেই দেশে কোনও থ্রি-জি মোবাইল ফোন আমদানিও হয়নি। সরকার থ্রি-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেবে—এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদক ও আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ ফিচার ফোন বিক্রি হয়েছে। আর স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ১ কোটির মতো। ফিচার ও স্মার্টফোন মিলিয়ে ৯৯ শতাংশ ফোনই দেশে তৈরি। ফিচার ফোনে ফোর-জি দিলে সামগ্রিকভাবে মোবাইল ফোন বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে উৎপাদক ও আমদানিকারকদের মনে। তার পরও তারা চান ফিচার ফোনে ফোর-জি আসুক। তাহলে টেকনোলজির একটা ট্রান্সফরমেশন হবে।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইএ ও দেশীয় মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড সিম্ফনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বলেন, দেশে ফিচার ফোনে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু করতে হলে টু-জি ফোন আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। দেশের ফিচার বা টু-জি মোবাইল সেট উৎপাদকদের এক বছর সময় (গ্র্যাজুয়েশনের জন্য) দিতে হবে। তাহলে আমরা পারব। এটা আমরা বরাবরই বলে আসছি। তিনি মনে করেন, টু-জি ফোন আমদানি বন্ধ না করে, নির্দিষ্ট সময়ের পরও দেশে টু-জি ফোনের উৎপাদন বন্ধ না করলে, এ প্রকল্প সফল হবে না। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে টু-জি ফোন চালু রেখে ফিচার ফোনে ফোর-জি দিলে কেউ ব্যবহার করবে না। একজন প্রান্তিক পর্যায়ের লোকের ফোর-জি কী কাজে লাগবে। তিনি কেন বেশি দাম দিয়ে ফিচার ফোন কিনবেন, যেটাতে ফোর-জি ব্যবহার করা যায়। তিনি জানান, ফিচার ফোনে যদি গ্রাহক অ্যাপ ব্যবহার করে কথা বলতে পারেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, ছবি শেয়ার করতে পারেন- তাহলে এ ফোন দ্রুত বাজার পাবে।

ট্রানশান বাংলাদেশের (আইটেল, টেকনো ও ইনফিনিক্স মোবাইলের উৎপাদক) প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, ফিচার ফোনের জন্য ফোর-জি চিপসেট কিনতে প্রয়োজন হবে ৪ থেকে ৫ ডলার (প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা)। তাহলেই ফিচার ফোনে ফোর-জি ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বাজারে একটা ঝুঁকি আছে, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে টু-জি মোবাইল ফোনের দেশে ঢুকে পড়া। ওটা বন্ধ করতে না পারলে এ দেশের উৎপাদকরা সমস্যায় পড়বে। এ ধরনের নিশ্চয়তা পেলে আমরা যেকোনো সময় ফিচার ফোনে ফোর-জি আনতে সক্ষম হবো। রেজওয়ানুল হক বলেন, সরকার যদি দেশে টু-জি বন্ধ করার পরিকল্পনা করে, তাহলে আমাদের যে ‘বার’ ফোন আছে, সেগুলো ফোর-জি এরাবল ফিচার ফোন করা সম্ভব। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত