অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে সায়মন ল্যাপলাস হাজির করালেন এক ডেমন বা দৈত্যকে। যিনি ভবিষ্যতের সব ঘটনা পাই টু পাই বলে দেবেন। ভবিষ্যদ্বাণী করবেন গোটা মহাবিশ্বের প্রতিটা কোণে আগামীতে ঘটবে এমন সকল ঘটনার। ল্যাপলাস জানতেন মহাপুরুষের পক্ষেও সম্ভব নয়। পদার্থবিজ্ঞানে সেই ডেমন ল্যাপলাসের দৈত্য নামে অমর হয়ে গেছে।
এই দৈত্যের কাজ কি: অতিমানবিক এক কাজ করতে হবে সেই দৈত্যের। তবেই আমরা পাব ভবিষ্যতের সব রূপরেখা। এজন্য দৈত্যকে খাটতে হবে, জানতে গোটা ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস। প্রায় ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন আগেই বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছি। আদুরে বাংলা নামে যেটাকে আমরা বলি মহাবিস্ফোরণ। সেই মহাবিস্ফোরণের সাথে সাথে জন্ম হয়েছিল সময়ের। জন্ম হয়েছিল স্থানের। মোটা কথা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে জনপ্রিয় টার্ম স্পেসটাইম বা স্থানকালের শুরুটাই হয়েছিল মহাবিস্ফোরেণর সাথেই সাথেই। এরপরে প্রথম তিনমিনিটেই প্রচণ্ড গতিতে প্রসারিত হয়েছে স্থানকাল তথা মহাবিশ্ব। বিস্ফোরণের শক্তি থেকে তৈরি হয়েছে বস্তুকণা আর আলো। এরপর কালের বিবর্তনে আরো প্রসারিত হয়েছে মহাবিশ্ব। প্রসারণের সাথে সাথে তৈরি হয়ে গ্যালাক্সি, গ্রহ-নক্ষত্র, উপগ্রহ-বামনগ্রহ, বামনগ্রহ, ধূমকেতু আরো কত কী! মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যায় প্রায় ১০ হাজার কোটি। একেকটা গ্যালাক্সিতে আবার কয়েক হাজার কোটি নক্ষত্র থাকে। গোটা মহাবিশ্বে নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদির সংখ্যা বের করা শুধু কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি গ্রহে, প্রতিটা উপগ্রহে, প্রতিটা নক্ষত্রে প্রতি মুহূর্তে কত ঘটনা ঘটছে। সামান্য একটা ব্যাকেটিরায় দেহেই ঘটছে কত ঘটনা। মানুষের কথা বাদই দিন। চলছে পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রন আর নিউক্লিয়নদের মধ্যেও কত কত অ্যাকশন রি-অ্যাকশন। শুধু পৃথিবীর মাত্র এক মুহূর্তের ঘটনার হিসাব কি কষা সম্ভব? সম্ভব নয়। পৃথিবীর পাঁচশ’ কোটি বছরের হিসাব রাখা আরও কঠিন। সেখানে গোটা মহাবিশ্বের ১৩.৮ বিলিয়ন বছরে প্রতিটা গ্যালাক্সিতে, নক্ষত্রে, গ্রহে, মহাজাগতিক বস্তুতে, প্রতিটা পরমাণুতে ঘটে যাওয়া ঘটনার হিসাব রাখবে কে? ল্যাপল্যাস বলেছিলেন, তার সেই দৈত্যের পক্ষে সম্ভব মহাবিশ্বের জীবনের ইতিহাসে যত ঘটনা ঘটেছে, সব ঘটনার হিসাব তার নখদর্পনে থাকবে। সত্যিই যদি এমন কোনো দৈত্য থাকে বা তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই দৈত্যের পক্ষে সম্ভব মহাবিশ্বে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তার সকল ঘটনার জবাব দেওয়ার। পদার্থবিজ্ঞান অনেক কিছুরই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। যেমন আপনার হাতে একটা কলম আছে, সেটা আপনি ছেড়ে দিলেন হাত থেকে। তখন আপনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন সেটা মেঝেতে পড়বে।