ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাইম ট্রাভেল কী সত্যিই সম্ভব?

টাইম ট্রাভেল কী সত্যিই সম্ভব?

‘কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট’ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এখন এক নতুন গবেষণা নিয়ে হাজির হয়েছেন। গিজমোডোর রিপোর্ট অনুযায়ী, এ এক অদ্ভুত উপায়, যেখানে কোয়ান্টাম কণাগুলো একে-অপরের সঙ্গে যেন কার্যত কথা বলতে পারে। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘ইন্টারঅ্যাক্ট’ করা। ২০১৮ সালের মার্ভেল-মুভি ‘অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াস্প’-এও টাইম ট্রাভেল নিয়ে কিছুটা এরকম পন্থারই কথা বলা হয়েছিল।

টাইম ট্রাভেল বিষয়টি অনেকের কাছেই একটি ভারী মেশিনের সঙ্গে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে যুক্ত করে অতীত বা ভবিষ্যতে ভ্রমণ করা। ‘কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট’ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এখন এক নতুন গবেষণা নিয়ে হাজির হয়েছেন।

গবেষণায় বলা হচ্ছে- ‘গেডানকেন এক্সপেরিমেন্ট’। এই শব্দ বা ‘টার্ম’ সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। পদার্থবিদ্যার সীমানার বাইরে গিয়ে বাস্তব পরীক্ষার পরিবর্তে তাত্ত্বিক পরীক্ষার উল্লেখ করতে গিয়েই এই শব্দের উল্লেখ করেন তিনি। ‘ফিজক্স রিভিউ লেটার্স’ এ নতুন গবেষণা দলটির এ কাজটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে, যেখানে ‘কার্যকর টাইম ট্রাভেল’-এর উল্লেখ রয়েছে।

এখন স্বভাবতই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে, কী এই ‘কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট’? এটি হলো এমনই এক ঘটনা, যেখানে দুই বা ততোধিক কোয়ান্টাম কণার বৈশিষ্ট্য একে-অপরের দ্বারা নির্ধারিত হয়। যেহেতু দুটি কণার এনট্যাঙ্গেলমেন্ট (বাংলায় যাকে বলে জট), এক্কেবারে কোয়ান্টাম স্তরে ঘটে, তাই তাদের শারীরিক দূরত্বসহ অন্যান্য উপাদান ইন্টার‌্যাকশনে কোনো প্রভাব ফেলে না। ফলে জট বাঁধা একটা কণার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে অন্য আরেকটি কণা।

এই গবেষণায় টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত যে পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল, তার নাম ‘ক্লোজড-টাইমলাইক কার্ভ’। এখানে কার্ভ বা বক্ররেখা এমনই একটি কণা দ্বারা গঠিত, যার জীবনকাল বৃত্তাকার স্পেসটাইমে পেছনের দিকে চলে। পরীক্ষায় যাতে একটি পরিমাপযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়, তার জন্য বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম ইন্টার‌্যাকশনের সময় ফোটোনিক প্রোবগুলোকে বিষয় হিসেবে ব্যবহার করেন। পরিমাপযোগ্য সেই ফলাফলের উপরে ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা সম্ভব হবে কোনো ইনপুটে সব থেকে ভালো ফল মিলতে পারে। এখন এ টাইম ট্রাভেল এক্সপেরিমেন্ট যেহেতু কোয়ান্টাম অপারেশনের দ্বারা সম্ভব হয়েছে, তাই আরো বিশদ ফলাফল পেতে গবেষকরা কোয়ান্টাম প্রোবের মানগুলোকে এনট্যাঙ্গলমেন্ট বা দুই কণার জট লাগার মাধ্যমেই নির্ধারণ করতে পারেন।

এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, টাইম ট্রাভেলের প্রভাব প্রতি চারবারে একবার পড়তে পারে বা ব্যর্থতার হার হতে পারে ৭৫ শতাংশ। এই ব্যর্থতার হারে সামান্য সাফল্যের স্বাদ পেতে গবেষকরা পুরোনো কণাগুলোকে সরাতে গিয়ে সংশোধিত তথ্যসহ ফোটনগুলো পেয়েছিলেন। তারপরই তারা সেই সব তথ্য যাচাই করার জন্য প্রচুর পরিমাণে ফোটন সরবরাহ এবং ফিল্টার ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছিলেন।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট এবং এই গবেষণাপত্রের মূল লেখক ডেভিড আরভিডসন শুকুর বলেছেন, ‘আমরা যে পরীক্ষার কথা বলেছি, তা স্ট্যান্ডার্ড (অর্থাৎ কোয়ান্টাম নয়) পদার্থবিদ্যা দিয়ে সমাধান করা অসম্ভব। কারণ, তা সময়ের স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চলে। সেই জায়গা থেকেই মনে হয়, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট এমন উদাহরণ তৈরি করতে পারে, যা কার্যকরভাবে টাইম ট্রাভেলের মতোই।’

টাইম ট্রাভেলের প্রতি আমাদের এক অদ্ভুত মুগ্ধতা রয়েছে। সিনেমার টানটান চিত্রনাট্য যেন সেই কল্পজগত সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু পর্দায় এতদিন ধরে আমরা টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে যা দেখেছি, তা সাধারণ মানুষের কাছে বড়ই ভজকট ব্যাপার। চলচ্চিত্র পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান যেমনটা তার ছবিতে দেখিয়েছেন, টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে অনেকের ধারণাই যেন কিছুটা সেরকমই রয়ে গেছে এখনও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত