ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বুধের পরতে পরতে লুকানো হীরার খনি

বুধের পরতে পরতে লুকানো হীরার খনি

সৌর জগতের সবচেয়ে ছোট সদস্যের অন্দরে লুকিয়ে অমূল্য সম্পদ। সম্প্রতি নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বুধে থাকতে পারে ১৬ কিমি দীর্ঘ ও পুরু হীরার স্তর। নাসার বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারকে অপ্রত্যাশিত এবং চমকপ্রদ বলছেন গবেষকেরা। ডেলি এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান থেকে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন যে, বুধপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ কিমি নীচে হিরের এই পুরু স্তরটি রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযানটি বুধকে প্রদক্ষিণ করেছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে ছোট্ট গ্রহটির গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে মহাকাশযানটি। নতুন এই আবিষ্কারটির ফলে গ্রহটির গঠন সম্পর্কে পূর্ববর্তী যে সব তত্ত্ব নাসার হাতে ছিল, তা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধের পৃষ্ঠে গ্রাফাইট প্যাচের উপস্থিতি দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন যে, গ্রহটিতে একসময়ে কার্বনসমৃদ্ধ ম্যাগমার মহাসাগরের উপস্থিতি ছিল। এই কারণে ম্যাগমা বুধপৃষ্ঠের উপরে গ্রাফাইটের স্তরটি তৈরি করেছে এবং গ্রাফাইটের জন্য বুধের রঙ কালো। নতুন গবেষণার ফলে এটা মনে করে হচ্ছে যে, বুধ গ্রাফাইট গঠিত নাও হতে পারে। বরং কার্বনের আরো মূল্যবান রূপ হীরা দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। বুধের পৃষ্ঠ এবং কেন্দ্রের সীমানার মধ্যবর্তী প্রবল চাপের ফলে কার্বনসমৃদ্ধ ম্যাগমা হীরায় পরিণত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে নাসা। নয়া এই আবিষ্কার সূর্যের নিকটতম গ্রহ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রহস্য ব্যাখ্যা করতে পারবে বলে মনে করেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। বুধ বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছে। এর প্রধান কারণ ঘন অন্ধকারে ঢেকে থাকা বুধপৃষ্ঠ। গ্রহটির কেন্দ্রের ঘনত্ব এবং পৃষ্ঠে থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো অসময়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কারণে সমস্যায় পড়েছেন নাসার গবেষকেরা।

গবেষকদের মতে, হীরার স্তরটি দুইটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হতে পারে। কার্বন-সমৃদ্ধ ম্যাগমা জমাট বেঁধে স্ফটিকের আকার ধারণ করতে পারে। অথবা বুধের কেন্দ্রের তরল জমাট বেঁধে এই দীর্ঘ ও পুরু হীরার স্তর তৈরি হয়েছে। নতুন এই সম্ভাবনাটি কতটা সত্যি, তা জানার জন্য মহাকাশবিজ্ঞানীরা নাসার পরীক্ষাগারে বুধের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। বুধের চরম পরিবেশকে অনুকরণ করে কৃত্রিম সিলিকেটের উপর সাত গিগাপাস্কালেরও বেশি চাপ প্রয়োগ করে পরীক্ষাটি করা হয়েছিল। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এই নতুন গবেষণাটি সৌরজগতে নানা গ্রহের গঠন এবং বিবর্তনের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এই আবিষ্কারটি থেকে মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, কেন বুধের প্রধান আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ প্রায় ৩৫০ কোটি বছর আগে তুলনামূলক ভাবে দ্রুত শেষ হয়েছিল।

হীরার স্তরের দ্রুত তাপ শুষে নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যার ফলে আগ্নেয়গিরিগুলোর অকালসমাপ্তি ঘটেছে বলে মনে করছেন মহাকাশ গবেষকেরা। নাসার গবেষক দলটি বুধের ‘ম্যান্টেল-কোর’ সীমানায় হীরার স্তরের তাপীয় প্রভাব নিয়ে আরো বেশি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে। বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরো বিশদে জানতে ২০২৬ সালের ‘বেপিকলম্বো মিশন’ থেকে নতুন তথ্য আনানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে নাসা। বুধে হীরার উপস্থিতি নিয়ে মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে আলোড়ন উঠলেও এই মুহূর্তে তা অধরাই থেকে যাবে। যে গভীরতায় এই হীরার স্তরের অস্তিত্ব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেখান থেকে তা খনন করা কার্যত অসম্ভব বলে জানিয়েছে নাসা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত